মোহাম্মদ জুবাইর:
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জনবসতি এলাকা চকবাজার ও বাকলিয়া কেন্দ্র করে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলছে স্থানীয় ৪ জন প্রতিনিধির অনুসারীরা। অভিযোগে জানা যায়, চাঁদার ভাগ স্থানীয় নেতা ছাড়াও যাচ্ছে পুলিশের অসাধু কিছু কর্মকর্তার পকেটে। চকবাজারে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত কাঁচা বাজার ভবন থাকলেও ফুটপাতে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকানপাট ও অবৈধ মাছ বাজার। যার ফলে সড়কের চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। চকবাজার, ধুনিরপুল সড়কের আশেপাশে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ভাসমান দোকানপাট চসিক কর্তৃক বার বার উচ্ছেদ করলেও পুনরায় গড়ে উঠে। সকালে উচ্ছেদ করলে সন্ধ্যায় আগের অবস্থানে ফিরে যায়। একদিকে সড়কে অবৈধ ভাসমান দোকানপাট অপরদিকে বিদ্যুৎ খেকো ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে ভোগান্তিতে পরছে সাধারণ পথচারী। অথচ ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্মাণ করেছে চকবাজার কাঁচা বাজার ভবন। যাতে ১৮০ টির মতো দোকান করার ব্যবস্থা রয়েছে। সড়কের উভয় পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বাজারের ফলে বাজার ভবনের ভিতর দোকান-পাট চালু করতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজার ভবনের দোকানগুলো ভাড়া না হওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে চসিক কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক কর্মকর্তা জানান, বারবার উচ্ছেদ করার পরেও এই সব বন্ধ না হওয়ার পিছনে মুল কারন- স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের ইন্ধন। চাঁদার বিনিময়ে ভাসমান দোকানপাট তৈরি করছে তারা। তারপরও আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, দৈনিক চাঁদা দেওয়ার বিনিময়ে তারা কেবি আমান আলী রোডের ধুনির পুল থেকে ফুলতলা জালিয়া পাড়া সড়ক,প্যারেড কর্ণার, কেয়ারী, তেলপট্টি, গুলজার মোড়ের আশেপাশে হতে চকবাজার থানার সামনে পর্যন্ত তারা ব্যবসা করছেন। চসিক কতৃপক্ষ উচ্ছেদ করে গেলেও চাঁদা আদায়কারীদের সহায়তা পুনরায় আমরা ব্যবসা শুরু করি। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, চকবাজার কেন্দ্রিক চাঁদাবাজির খাতগুলো হচ্ছে- কাঁচা বাজার, আশেপাশের পোশাক কারখানা, জুট ব্যবসা, কোচিং সেন্টার, বেসরকারি স্কুল, কিন্ডার গার্ডেন, নির্মাণাধীন ভবন ও অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। স্থানীয় নেতাদের অধীনে এই সব খাত থেকে যারা প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- বিভিন্ন মামলায় জেল থেকে জামিনে থাকা সামাদ, শ্রমিক সংগঠন নেতা ও পুলিশের সোর্স পরিচয় দানকারী অলি, নয়ন, সাইফুল (রাহাত্তার পুল) জুয়েল, রুবেল,সোহেল ও বিপ্লব নামের তিন জন চাঁদা আদায়কারীকে দৈনিক ৫০০ টাকা বেতনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিদিন ভাসমান সবজি দোকান থেকে ২৫০ টাকা, অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, টমটম, মাহেন্দ্রা থেকে ১৫০/৩০০ টাকা হিসেবে করে উত্তোলন করা হয়। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিকশা চালক আজিজ, মহিবুল্লাহ, নতুন ব্রিজ এলাকার চাঁদাবাজ জানে আলম, টোকাই পলাশ সেন, জাহাঙ্গীর আলম, রোকন উদ্দিন জয়, লাইনম্যান টোকাই জমির, চাঁদাবাজ আলাউদ্দিন সহ বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট চলে বাকলিয়ার বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত দখল যান পরিমাণ থেকে চাঁদাবাজি সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা দখল, জুয়ার বোর্ড সহ একাধিক স্থান থেকে তারা প্রতিনিয়ত করছে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি। বাকুলিয়াসহ প্রতি দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎতের বাল্ব সংযোগ ৫০ টাকা, পুলিশ ফাঁড়ির নামে ২০টাকা, থানার নামে ৫০ টাকা ও টহল পুলিশের নামে ২০ টাকা উত্তোলন করা হয়।সব মিলিয়ে মাসে ২০/২২ লাখ টাকা। এই বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল কাদের সাথে কথা বললে তিনি জানান থানার সোর্স পরিচয়ে ও থানা, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করার কোন সুযোগ নেই। সেরকম কোন অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিব। যখনই থানার আশেপাশে ভাসমান দোকানপাট বসে তখনই তাৎক্ষণিক টহল পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা জানান, বর্তমানে চাঁদাবাজি ফুটপাতে সীমাবদ্ধ নেই। নতুন ব্রিজ থেকে বহদ্দার, মুরাদপুর ২ নাম্বার গেট, রাহাত্তারপুল, চকবাজার ধুনিরপুল পর্যন্ত কোন রোড পারমিট না থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দৈনিক চাঁদার বিনিময়ে অবৈধ অটো রিক্সা, টমটম, মাহেন্দ্র সিএনজি চালু করায় প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। একদিকে অবৈধ ভাসমান দোকানপাট অপরদিকে অঘোষিত অবৈধ অটোরিকশা সিএনজি মিনি ষ্টেশন।সকাল ৮ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত চলে এই সব যন্ত্র দানব বিদ্যুৎ খেকো ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। যার ফলে পথচারীদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে চলাচল করতে হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/০৯ আগস্ট ২৩/ আর এম
- Advertisement -

