বিশেষ প্রতিনিধি:
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের ঢাকার উপ-পরিচালক (ডিডি) আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও থামেনি তার অনিয়ম। শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারী অংশ) তালিকাভুক্ত করতে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। তিনি তার অফিস সহকারীদের নিয়ে এমপিও সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদুল খালেক খুলনা বিভাগ থেকে বদলী হয়ে ঢাকা বিভাগের ডিডি হওয়ার পরপরই জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়মে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল খালেক টাকার বিনিময়ে কয়েকজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করেছেন। এমপিও ভূক্তির কাজ শেষ হলেও বিভিন্ন অজুহাতে তিনি ফাইল আটকে রেখেছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন নিজের স্বেচ্ছাচারিতায় ডিডি আব্দুল খালেক বিভিন্ন শিক্ষকের ফাইল আটকিয়ে রেখেছেন টাকা নেবার জন্য । পরে আলোকিত প্রতিদিনের অনুসন্ধান উঠে আসে ঢাকা বিভাগের এম পিও ভূক্তির দূর্নীতির চিত্র । মূলত, অর্থ লেনদেন করাই ফাইল আটকানোর মূল অভিপ্রায় বলে জানা যায়। ডিডি আব্দুল খালেকের অনেক নিয়ম নীতি বর্জিত কাজ এ প্রতিবেদক জানতে পারায় তাঁকেও হুমকি দিয়েছেন নিউজ না করার জন্য ।
নতুন এমপিও ভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ও স্তর পরিবর্তন হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালে এম পি ভূক্ত হলেও, তিনি শিক্ষকদের আজ পর্যন্ত এমপিও ভূক্তি করছেন না। বিষয়টি নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আলোকিত প্রতিদিনের হাতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য ।
আব্দুল খালেক ডিডি হওয়ার পূর্বে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কালীন সময়ে ঐ এলাকার অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়া যায় । দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার অধীনস্থ এক কর্মকর্তা জানান, তিনি নিজেকে জামাতের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিরীহ ও সাধারণ শিক্ষক – কর্মচারীদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করেন।
তিনি আরো জানান, আব্দুল খালেক ছাত্রজীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আব্দুল খালেক ধমক দিয়ে বলেন- উপরে জানিয়ে লাভ নাই, ছাত্ররাজনীতি করার সময় কত মানুষের রগ কেটেছি, আমার সাথে পাঙ্গা নিলে পুরনো রুপ আবার সামনে আনতে দ্বিধাবোধ করবো না।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিন মৈত্রী প্রকল্পের উদ্বোধন
মানিকগঞ্জ জেলার এক স্কুলের সভাপতির সাথে টেলিফোনে আব্দুল খালেকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমপিও ভূক্তির ফাইলে নানা গড়মিল আছে। দুই একদিনে সমাধান করা যায় না, আসেন বসেন চা খেয়ে যান, আলোচনা করে পথ বের করি, সমস্যা সমাধান করি। সভাপতি স্পষ্ট করে বলেন, ওনারা অল্প বেতনের শিক্ষক আপনাকে চা খাওয়ার পয়সা দিতে পারবেন না। সভাপতি ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে আব্দুল খালেক আর সভাপতির সাথে কোনপ্রকার যোগাযোগ করেননি। এমনকি সভাপতি যোগাযোগের চেষ্টা করলে পাত্তা দেননি।
এ বিষয়ে ডিজি মাউশীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এমন কি শিক্ষা সচিবকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
ডি ডি আব্দুল খালেক প্রকৃত পক্ষে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য শিক্ষকদের ফাইল আটকে রেখে তাদের উস্কে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
এ বিষয়ে ডি ডি আব্দুল খালেক সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এদিকে শুধু এমপিওভুক্তিতেই দুর্নীতি নয়, অভিযোগে ডিডি আব্দুল খালেকের আরও নানা অনিয়মের ফিরিস্তি জানা গেছে। ডিডি হওয়ার পর তিনি ৪০০ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের টাকা আত্মসাত করেন। পরে জানাজানি হলে তোপের মুখে টাকা ফেরত দেন। দুনীর্তির ডালপালা অনেক বিস্তৃত। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেও কোনো সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে আব্দুল খালেক বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করব না। তবে আমি বলব, সব অভিযোগই মিথ্যা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যখন অনিয়মে জড়িত হিসেবে নাম আসবে, তখন না হয় আমি এর প্রতিবাদ করবো। মাউশির পক্ষ থেকে তদন্ত করা হলেও, এসবে আমি ভয় পাই না । অনিয়মের প্রমান না রেখেই অনিয়ম করি বলে তিনি রাগত কন্ঠে জানান। শিক্ষক এমপিওর কাজ শেষ হবার পরেও তিনি যাচাই বাছাই এর নামে অনৈতিক ভাবে ফাইল আটকে রাখেন, বাসায় বসে লেনদেন হলে ফাইল অনুমোদন করেন, শিক্ষকরা দেখা না করলে বাসায় বসেই ইচ্ছা স্বাধীন ফাইল রিজেক্ট করেন, এভাবেই চলছে বেসরকারি শিক্ষকদের হয়রানি।
আরও পড়ুন: ২৮ জুলাই এসএসসির ফল প্রকাশ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেন ডি ডি সাহেব উপজেলা, ও জেলা কমিটি করে এমপিও প্রস্তাব পাঠাবার জন্য পরপর তিনটি চিঠি ইস্যু করে মাঠ প্রশাসনকে চাপের মুখে ফেলেছিলেন । তার আচরণগত সমস্যা আছে মর্মে ডি ডি অফিসে কর্মরত একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে নিজ জেলা জামালপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন বলে এ প্রতিবেদকের নিকট তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি