আলোকিত ডেস্ক:
বন্যা যেন কিছু এলাকার মানুষের নিয়তি হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর বর্ষাকাল এলেই বন্যায় ভাসবে সব কিছু। বৃহত্তর সিলেট, বিশেষ করে সুনামগঞ্জে গত বছর যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে তার স্মৃতি সেখানকার মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি। এ বছর বর্ষার শুরুতেই আবারও শুরু হয়েছে বন্যার আলামত। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্রতিটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ছাতকে সুরমার পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উজানে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে কুড়িগ্রামে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদীর পানি এখনো বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও এরই মধ্যে জেলার চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এসব এলাকার আমন বীজতলা, পাট, পটোল, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের সংকট। পাশাপাশি অনেক এলাকায় ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। জানা যায়, উজানে ভারতের আসাম, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আসামে অন্তত ২০টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। সেসব অঞ্চলে আরো কয়েক দিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই পানি যত নেমে আসবে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে থাকবে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে পারে। একইভাবে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর একটি বড় কারণ নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে নদীগুলোতে পানি প্রায় আসেই না। পানির প্রবাহ না থাকায় নদীগুলোর ভরাটপ্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। বর্ষায় উজানের সব বাঁধ খুলে দেওয়ায় একসঙ্গে এত পানি নেমে আসে যে আমাদের নদীগুলো তা ধারণ করতে পারে না। শুরু হয় আকস্মিক বন্যা। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কথা আমাদের ভাবতেই হবে। খননের মাধ্যমে নদীগুলোকে নাব্য করতে হবে। মজবুত তীর রক্ষা বাঁধ গড়ে তুলতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিপ্রবাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে, ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে। তার আগে উপদ্রুত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।