এবার পশুর হাটে থাকবে শক্ত মনিটরিং পদ্ধতি

0
2487

আলোকিত ডেস্ক:

পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে আগামী রোববার (২৫ জুন) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর হাট বসবে রাজধানীতে। ইতোমধ্যেই ঢাকার হাটগুলোয় আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুও। ট্রাক-পিকআপে করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব পশু আনছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির পশুর হাটে অসুস্থ পশুর চিকিৎসায় সার্বিক সহায়তা করবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। সেই সঙ্গে পশুর হাটে শক্ত মনিটরিং করবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সম্প্রতি এসব কথা জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদার। পশুর হাটের নানাবিধ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই যেন স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কোরবানির পশু বেচাকেনা করতে পারেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অনেক খামারি ও ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসেন, অনেক টাকায় বিক্রি করে। আবার কাউকে অজ্ঞান করে বা যেকোনোভাবে টাকা কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে হাটে ক্যাশলেস পদ্ধতি থাকছে- এটা ভালো বিষয়। ডা. এমদাদুল হক তালুকদার জানান, ঢাকায় যে হাটগুলো হবে সেখানে ভেটেরিনারি টিম থাকবে, ডাক্তার থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুথের সাথেই আমরা সব জায়গায় ভেটেরিনারি টিম করার চেষ্টা করছি। এপ্রোন পরা থাকবে, ফলে যে কেউ দেখলেই বুঝবে- এরা ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। ব্যানার থাকবে। তারা হাট ঘুরে দেখবে কোনো পশু অসুস্থ কি না। মানুষ অনেক ভ্রমণ করলে যেমন ক্লান্তি লাগে পশুর ক্ষেত্রেও দীর্ঘযাত্রায় এরকম ক্লান্তি বা ঝিমুনি থাকতে পারে। একটু বিশ্রাম ও পানি খাওয়ালে সুস্থ হয়ে যায়। আবার ট্রাক থেকে নামাতে গিয়েও পশুর ইনজুরি হতে পারে। এসব বিষয় আমাদের ভেটেরিনারি ডাক্তাররা দেখবেন। অন্য বছরের মতো এবারও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কঠোর মনিটরিং থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কঠোর মনিটরিং থাকবে ক্যামিকেল, স্টেরয়েড, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বা অবৈধ পন্থায় হৃষ্টপুষ্ট করা গরুর ব্যাপারে। কড়া মনিটরিংয়ের কারণে এসব এখন আর দেখা যায় না। এছাড়াও সারাদেশে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সবার মধ্যে সচেতনতা এসেছে। এতে খামারিরা এখন স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকে। তারপরও আমাদের মনিটরিং থাকবে। খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এই মাংস আমি-আপনি সবাই খায়, এতে খামারিরাও সচেতন। এছাড়াও প্রশাসনিক পর্যায়ে একটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ওষুধের দোকানে যারা স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন বিক্রি করবে তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে আমাদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এসব বিক্রির ব্যাপারে।Qurbaniগতবারের মতো এ বছরও দেশে গবাদি পশুর পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সবমিলিয়ে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ পশু। যা চাহিদার চেয়ে প্রায় ২১ লাখ বেশি। ফলে এবারও নির্বিঘ্নে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে জানিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, পশুর কোনো সংকট নেই। আমাদের সারাদেশে কিন্তু ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। উপজেলায় অনেকগুলো পশুর হাট বসে। সে ক্ষেত্রে বড় হাটে টিম থাকবে, আর অন্য সব স্থানে আমাদের টিমের মোবাইল নম্বর থাকবে। সবমিলে ১ হাজার ৬৯৭টি ভেটেরিনারি টিম সারাদেশে পশুর হাটে সেবা দেবে। এছাড়াও রাজধানীর স্থায়ী-অস্থায়ী হাটগুলোতে ৫ সদস্যের ভেটেরিনারি টিম কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদার। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। পাশাপাশি কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার আশপাশে অনেক খামার গড়ে উঠেছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি বলেন, এটা ভালো বিষয়। অনেকেই খামার গড়ে তুলছেন, স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে শুধু এই খামারের গরুতে ঢাকার চাহিদা মেটে না। এ জন্য সারাদেশ থেকেই ঢাকায় গরু আসে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিরা একটু ভালো দামের আশায় অনেকেই শহরমুখী হয়। এ ক্ষেত্রে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেও এখন দ্রুত পশু আনা যাচ্ছে।Qurbaniএছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে পশু দ্রুত আনা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করে কোনো বাজারে হঠাৎ পশু কমে গেলে বা সংকট দেখা দিলে দ্রুতই কিন্তু কাভার হয়ে যাচ্ছে। কোনো বাজারে দাম হঠাৎ বেশি হলে পশুর গ্যাপ পূরণ হয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতারাও ওইভাবে হিসেব করে ওইসব বাজারে মুভমেন্ট করতে পারে। আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে এসে অপেক্ষা করত। এখন সকালে গরুর ট্রাক যাত্রা করলে মুহূর্তেই চলে আসছে ঢাকায়। হাটকেন্দ্রিক সমস্যাগুলো নিয়েও কাজ হচ্ছে উল্লেখ করে অধিদফতরের মহাপরিচালক এমদাদুল হক বলেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যারের সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মিটিং হয়েছে। অনেক সময় এক হাটের গরু আরেক হাটে জোর করে নামানো হয়। এসব বিষয়ে কড়া মনিটরিং করছেন। অনেক সময় টার্গেট করেও এসব করা হয়। হাটকেন্দ্রিক যে বিভিন্ন হ্যাজার্ড আছে এসব কিন্তু তারা শক্তভাবে মনিটরিং করছেন। বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, উপজেলার ইউএনও এবং আমরা সম্মিলিতিভাবে এসব মনিটরিং করছি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহনী এসব বিষয়ে কিন্তু তৎপর আছেন। আবার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কাজও করছেন। পাশাপাশি বর্ডার দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু এসে যেন দেশের খামাররা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়. সে বিষয়েও বিজিবিকে বলা হয়েছে। এ বিষয়েও কিন্তু মনিটরিং হচ্ছে। আমাদের খামারিদের উৎপাদিত পশু দিয়েই আমরা উদ্বৃত্ত আছি।Qurbaniএদিকে, সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার এক বৈঠকে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া থামানো যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সড়ক অথবা নৌপথে কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে পশুবাহী গাড়ির সামনে গন্তব্যস্থান/পশুর হাটের নাম উল্লেখ করে ব্যানার টাঙানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কোরবানির পশু পরিবহনে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে নিকটস্থ থানা অথবা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করার অনুরোধের পাশাপাশি জাল টাকা প্রতিরোধে পশুর হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। অন্যদিকে, এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০টি পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন অর্থাৎ ‘ক্যাশলেস’ লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব হাটে নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে পশু কেনা যাবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদি পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। আর এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত আছে। সবমিলিয়ে এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু রয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২২ জুন ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here