আজ মঙ্গলবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ১২ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইরানের পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে ইসরায়েল

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইরানের পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েল লড়াই চালিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার দাবি, চিরশত্রু তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতে ইসরায়েল তার ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাবে।

ইরানের ক্ষমতাচ্যুত শাহের নির্বাসিত পুত্রের অংশগ্রহণে ১৭ এপ্রিল সোমবার আয়োজিত হলোকাস্ট অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করেন। বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। দশকের পর দশক ধরে চলছে ইরান এবং ইসরায়েলের শত্রুতা। প্রতিদ্বন্দ্বী এই দেশ দু’টি একে অপরের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত। এছাড়া শুরু থেকেই ইরানের বর্তমান শাসক গোষ্ঠীকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে ইসরায়েল। আর এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সফরে গেছেন ইরানের ক্ষমতাচ্যুত শাহের নির্বাসিত পুত্র রেজা পাহলভি। সোমবার আয়োজিত হলোকাস্ট অনুষ্ঠানে তাকে পাশে নিয়েই ইরানের পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু।

বার্লিনে নিজের সাম্প্রতিক সফরের কথা স্মরণ করে নেতানিয়াহু এদিন উল্লেখ করেন, নাৎসি-যুগের জার্মানির পর থেকে ‘বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু আমাদের (ইসরায়েলকে) ধ্বংস করার আহ্বান বন্ধ হয়নি এবং আজ (এই আহ্বান) তেহরানের ভয়ঙ্কর শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে আসছে।’

- Advertisement -

হলোকাস্ট স্মরণ দিবসের প্রাক্কালে দেওয়া বক্তৃতায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইরানের সাথে (পশ্চিমাদের) পারমাণবিক চুক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করছি। কারণ এই চুক্তি ইরানকে তার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ প্রশস্ত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবং এই একই কারণে আমরা আমাদের চারপাশে ইরানের সন্ত্রাসী প্রক্সিগুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে লড়াই করছি।’

এএফপি বলছে, ইরানের নির্বাসিত ক্রাউন প্রিন্স রেজা পাহলভি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তার বাবা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের সময় ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছিলেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা মন্ত্রী গিলা গামলিয়ালের অতিথি হিসাবে সোমবারই ইসরায়েলে পৌঁছান পাহলভি। হলোকাস্ট অনুষ্ঠানের আগে তিনি দাবি করেন, ইরানের বর্তমান সরকার ইরানি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ ইরানে আমাদের এমন একটি শাসকগোষ্ঠী রয়েছে যারা হলোকাস্ট কখনও ঘটেছে বলে স্বীকার করে না। আর তাই এখানে আমার সহকর্মী স্বদেশীদের প্রতিনিধিত্ব করা আমার দায়িত্ব এবং একইসঙ্গে হলোকাস্টের শিকারদের সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানানোও আমার দায়িত্ব।’

২০১৫ সালে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য ইরানের সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া।

কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মূলত ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। এমনকি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরানকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।

পরে ২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর এই চুক্তি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও এ নিয়ে ইরানের সঙ্গে এসব দেশের কয়েক দফায় আলোচনা হলেও নানা শর্তের বেড়াজালে তা এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরান প্রায় ৮৪ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে বলে গত ফেব্রুয়ারিতে জানায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। তবে সংস্থাটির এই দাবি সেসময় প্রত্যাখ্যান করে তেহরান। যদিও ৮৪ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করা হলেও তা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচেই ছিল।

ইরান অবশ্য বরাবরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা অস্বীকার করে এসেছে। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির দাবি, ৬০-শতাংশ বিশুদ্ধতার বাইরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কোনও চেষ্টাই তারা করেনি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮এপ্রিল-২০২৩/মওম

- Advertisement -
- Advertisement -