সকাল ৯:৩৪ | রবিবার | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি

সকাল ৯:৩৪ | রবিবার | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি

আগুন আগুন সময় হয়েছে এবার জাগুন জাগুন: আশিকুল কাদির

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

আশিকুল কাদির :

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ। আগুনের সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে খোদ রাজধানীতে। মিরপুর মহাখালি হয়ে আগুনের আতঙ্ক ছাড়েনি ধানমণ্ডি-প্রিয়াঙ্গন মার্কেটের পাশর্^বর্তী বিল্ডিংএর আগুনও। আগুনে অনেক প্রাণ গেছে সিদ্দিক বাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায়। আগুনের লেলিহান শিখায় দুমড়ে মুচড়ে সর্বশান্ত হয়েছে বঙ্গবাজারসহ পাশ^বর্তী আরো ছয়টি মার্কেটের। চোখের জলে নরম হয়েছে এই এলাকার মাটি-পাথর-ধুলিকনা। মানুষের দীর্ঘশ^াসে ভরপুর আশপাশ। এক অদৃশ্য আগুনে পুড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক সংসার। পুড়ছে তাদের আগত ঈদের আনন্দ। আর যারা এখানে ব্যবসা করবার জন্য দূর থেকে অর্থ লগ্নি করেছেন তারাও দিশেহারা।

আগুনের এই তান্ডবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা মেটাবার চিন্তা ব্যবসায়ীরা ভাবতে গেলে একেবারে মূক হয়ে যাওয়া ছাড়া বা কান্নায় ভেঙ্গে পড়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। পত্রিকার তথ্যমতে কেবলমাত্র বঙ্গবাজারের ক্ষয়ক্ষতিই হতে পারে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। ক্ষয়ক্ষতির সাথে আরো যে পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মচারি রয়েছে , রয়েছে তাদের পরিবার পরিজন তাদের ভাবনা কে ভাববে সে চিন্তাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। এতো যে ক্ষতি হয়ে গেলো তারপরও আমরা সচেতন হই না। আগুন লাগলেই ক‘দিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় যা কার্যকারিতা সহজে আর আলোার মুখ দেখে না। আলোর মুখ দেখে না বলতে বুঝাতে চেয়েছি প্রকৃতপক্ষেই এসবের জন্য কার্যকরি প্রতিকার ব্যবস্থা গস্খহণ করা হয় না। দেখা গেছে এসবের জন্য প্রথমেই মানুষের সচেতনতাকে দায়ী করা হয়। তারপর কিছু দোষ চলে যায় চলে যায় সিটি কর্পোরেশন এর ঘাড়ের ওপর, কিছুটা যায় ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা ওপর, আর সবশেষে যতো দোষ নন্দ ঘোষ ওই মাকের্ট কর্তৃপক্ষের ওপর। বলঅ হয় ওদের অবেহলার গল্প। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মার্কেটগুলোতে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতির কথাও পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়।

এই যে সব কারণ তা আসলে সময়ক্ষেপণ করারই নামান্তর। আসলে উন্নত দেশে থেকে আরো বিশেষজ্ঞ বা যন্ত্রাপতি বা নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক যা আমাদের দেশে বিদ্যমান যথাযত অথরিটি গ্রহণ করে না। অথচ দেশের একটি অথরিটি খুব আগ্রহভরেই খিঁচুরি রান্না শেখার জন্য বিদেশে পাড়ি দেয় বহর নিয়ে, যা জনগনের নিকট হাস্যকর ও তামাশায় পরিণত হয়।

- Advertisement -

এই যে আগনে পুড়ছে নগরের বিভিন্নস্থান বা মার্কেট তার আরো গভীরে গেলে দেখা যায় আগুন কী শুধু ব্যবসায়িদের ক্ষতি সাধন করছে নাকি গ্রাহক পর্যায়ে যারা আছেন তাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। সরবরাহ কম হবার কারণে গ্রাহক পর্যায়েও পরবর্তী সময় মূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়ে। আবার ধরা যাক যে ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হলো সে যে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়েছে তাতে ব্যাংকের ভেতরও খেলাপি ঋণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যাংকেও তারল্যর ওপর প্রভাব পড়ে। আবার ধরা যাক ব্যক্তিগত ধারদেনার ফলে সমাজের অনেক বিত্তবানের ওপর তার প্রভাব পড়ে। এভাবে একটি ঘর, আরেকটি ঘর করে করে এসবের প্রভাব বিভিন্নভাবেই বিভিন্ন সংস্থায় আঘাত করে।

অথচ আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকগন জেগে থেকে ঘুমন্ত মানুষের অভিনয় করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। নগর পরিকল্পনা, আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি ক্রয়, ফায়ার সার্ভিস আধুনিকীকরণ, মার্কেটের ভেতর যারা ব্যবসাা করেন তাদের মধ্যে দ্রুত সচেতনতার কর্মশালার ব্যবস্থা করতে ধীরগতিই অবলম্বন করবে, নাকি খিচুৃঁরি বানানো শেখার জন্য বিদেশে জনবলের বহর পাঠানোয় নজর দেবে-তা নিয়ে পাঠকমাত্রই প্রশ্ন করতে পারেন।

অতোসব আগুনের কথা বলতে গেলে অন্য এক দুর্বিসহ আগুনের কথা প্রসঙ্গক্রমেই আসে যা হলো দ্রব্যমূল্যে চড়া দামের আগুন। মূল্য বৃদ্ধির আগুনের তাপে এখন মানুষের মন পুড়ছে যা দৃশ্যত নয়। এখন আগুনের তাপ পড়েছে মাংসের ওপর সবজীর ওপর মসলাপতির ওপর, পড়েছে সকল প্রকার তেল পেট্রোল আর বিদ্যুতের ওপর। অতোসব আগুনে পোড়া মানুষের হৃদয় পুড়তে পুড়তে এমন অবস্থা বিরাজ করছে যে মানুষ তার প্রতিবাদের ভাষাও প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ মানুষের সামনেই ঝুলছে ডিজিটাল আইন। একটু কার্টুন মার্ক কথা বললেই চৌদ্দ শিকের ভয়। সুতরাং চুপ একদম চুপ। দেশের জনগনও একেবারেই চুপ।

যদিও দেশের বিরোধীদলগুলো বেশ শক্ত করেই এবার জোট তৈরি করছে, কারণ দেশে দৃশ্যত আগুন আর বিদগ্ধ মানুষের অন্তরের ভেতর ধিকিধিক জ¦লে থাকা ছাইপোড়া অদেখা আগুনের বিহিত যেনো তারা করবেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে দেশের বিরোধী শক্তি এবার কোমর শক্ত করে দাড়াতে চাচ্ছে-বিরোধীতৈর কথাবার্তায় পত্রিকার ভাষ্যমতে সাধারণ জনগন অন্যরকম এক আগুনের তাপ টের পাচ্ছে। মানুষ ভাবছে বৈশি^ক এই চরম দুর্দিনের ভেতরও নিজ দেশের ভেতরে যে আগুনের খেলা শুরু হবে তাতে বুঝি আর নিস্তার মিলবে না সহজেই।

হয়তো রমজানের পরপরই সমগ্র দেশের ভেতর অন্যরকম আগুনের বাতাস বয়ে যাবার শঙ্কায় অস্থির সাধারণ জনগন। তবে সবাইকেই বুঝতে হবে দেশের কথা, সমাজের কথা, বুঝতে হবে একটি দরিদ্র দেশের সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সব সমস্যা সমাধান করার, তারপরও সরকারের সমালোচকদের নিকট এসব সমাধান মর্যাদাকর কোনো অবস্থান তৈরি করে না। আপামর মানুষের জন্য তাই কোনো সুসংবাদ নেই বলা যায়।

তবে আমাদের আরো ধৈর্য ধারণ করা আবশ্যক কারণ বৈশি^ক মন্দার এই দুঃসময়ে সরকারের সীমাবদ্ধতাও স্মরণ রাখা আবশ্যক। যতোই আগুন আগুন খেলা শুরু হউক না কেনো সবাইকে সচেতন থাকতে হবে দেশের স্বার্থে-এটি মনে রাখা খুব জরুরী।

 

খ.র

- Advertisement -
- Advertisement -

সর্বশেষ