আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ৭ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের পোশাক খাতে অন্যায় করছে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে উপকরণ ও উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক কারখানা গুলো সেই অনুযায়ী অর্থ দেয়নি। বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড, ফলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে কারখানা গুলো।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সূত্রে বাংলাদেশের পোশাক খাতের সঙ্গে অন্যায় করেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড গুলো। অন্যায়কারী ব্র্যান্ড গুলোর নাম উল্লেখ ছিল না। তবে বুধবার আরেক ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান অভিযুক্ত সংস্থা গুলোর নাম প্রকাশ করেছে। চারটি ব্র্যান্ডের বেশিরভাগ সরবরাহকারী গবেষকদের বলেছেন, করোনা ভাইরাসে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার প্রায় দুই বছর পরেও তাদের একই হারে অর্থপ্রদান করা হচ্ছে। ব্রিটিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড লিডল, জারা’র মালিক ইনডিটেক্স, এইচঅ্যান্ডএম এবং নেক্সটের বিরুদ্ধে মহামারির মধ্যে প্রায় দুই বছর বাংলাদেশের পোশাক সরবরাহকারীদের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম অর্থ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের এক হাজার পোশাক কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। দাতব্য সংস্থা ট্রান্সফর্ম ট্রেডের সহযোগিতায় এটি পরিচালনা করেছে অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুল।জরিপে দেখা গেছে, লিডলের ১৯ শতাংশ, ইনডিটেক্সের ১১ শতাংশ, এইচঅ্যান্ডএমের ৯ শতাংশ এবং নেক্সটের ৮ শতাংশ বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে টেসকো এবং জার্মান ব্র্যান্ড অ্যালডির বিরুদ্ধেও। প্রথম চারটি ব্র্যান্ডের বেশিরভাগ সরবরাহকারী গবেষকদের বলেছেন, করোনা ভাইরাসে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার প্রায় দুই বছর পরেও তাদের একই হারে অর্থপ্রদান করা হচ্ছে। অথচ এর মধ্যে কাঁচামাল এবং উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে।

- Advertisement -

আইরিশ ব্র্যান্ড প্রাইমার্কের প্রায় অর্ধেক সরবরাহকারী অভিযোগ করেছেন, তাদের টাকা দেওয়ার হার বাড়েনি। এক-তৃতীয়াংশের বেশি বলেছেন, তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, চার বা ততোধিক কারখানা থেকে পোশাক কেনে এমন বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশই অন্যায় ক্রয় অনুশীলন এ জড়িত। এই অন্যায় অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে ক্রয়াদেশ বাতিল, অর্থপ্রদানে ব্যর্থতা, অর্থপ্রদানে বিলম্ব, মূল্যছাড় বা ডিসকাউন্ট দাবি। রয়েছে বাধ্যতামূলক ওভারটাইম ও হয়রানির মতো পরোক্ষ প্রভাবও। এই গবেষণা প্রতিবেদনকে বিশেষ সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ট্রান্সফর্ম ট্রেডের ফিওনা গুচ। তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা যখন অতীতে নির্ধারিত শর্ত লঙ্ঘন করে সরবরাহকারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রমিকরাই। এই পরিস্থিতি আটকাতে সুপার মার্কেট ওয়াচডগের মতো যুক্তরাজ্যের পোশাক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ফ্যাশন ওয়াচডগ গঠনের দাবি জানিয়েছেন ফিওনা।

অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ফ্যাশন ব্র্যান্ড লিডল বলেছে, এটি তার সরবরাহ ব্যবস্থায় ন্যূনতম মজুরি এবং টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনের টেকসই পূর্বপরিকল্পনা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্থাটি আরও বলেছে, লিডল বাংলাদেশসহ সরবরাহকারী অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের দায়িত্ব খুব গুরুত্বসহকারে নেয়। এটি তার পুরো সরবরাহ ব্যবস্থায় মূল সামাজিক মান মেনে চলা নিশ্চিত করতে চায়। নেক্সট বলেছে, মহামারির আগের তুলনায় সরবরাহকারীদের একই অথবা কম অর্থ দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ তারা পুরোপুরি অস্বীকার করছে। সংস্থাটি বলেছে, তার সরবরাহকারী ব্যয় বৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে গেছে। তবে গ্রাহকদের জন্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা স্থিতিশীল রয়েছে।

ইন্ডিটেক্স বলেছে, তারা কারখানার শ্রমিকসহ পোশাক শিল্পের সমর্থনে বৈশ্বিক পদক্ষেপে অংশ নিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, আমরা এরই মধ্যে দেওয়া বা প্রক্রিয়াধীন সব ক্রয়াদেশের জন্য অর্থ প্রদানের গ্যারান্টি দিয়েছি এবং সরবরাহকারীদের অনুকূল শর্তে ঋণ প্রদানের সুবিধার্থে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। প্রাইমার্ক অবশ্য স্বীকার করেছে, মহামারি চলাকালীন তারা কিছু ক্রয়াদেশ বাতিল করতে ‘বাধ্য হয়েছিল। কারণ ওই সময় সংস্থাটির প্রায় সব দোকান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করতে হয়েছিল। তবে এরপরও শ্রমিকদের সহায়তার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রাইমার্ক।

এটি বলেছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার সহায়তার লক্ষ্যে সরবরাহকারীদের জন্য আমরা ২ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের বেশি মজুরি তহবিল প্রতিষ্ঠা করি। ওই তহবিল থেকে ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়া বাংলাদেশি সরবরাহকারীরা অর্থ পেতেন। টেসকোর এক মুখপাত্র বলেন, আমরা আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থাজুড়ে ন্যায্য ও স্বচ্ছ অংশীদারত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মহামারির চ্যালেঞ্জের মধ্যে সহায়তার জন্য আমরা পোশাক সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছি। নিশ্চিত করতে চেয়েছি, তারা যেন শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন দিতে পারেন।

আমরা কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল বা বিলম্বে সরবরাহের জন্য জরিমানা করিনি। আমরা আমাদের অর্থপ্রদানের শর্তাবলি সম্পূর্ণরূপে মেনে চলেছি। অ্যালডি বলেছে, তাদের ব্র্যান্ডটি যে সম্পূর্ণ পৃথক দুটি কোম্পানিতে বিভক্ত অ্যালডি নর্ড ও অ্যালডি সুড গবেষণা প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ করা হয়নি। তাই এর ফলাফলে কোম্পানির আচরণের স্পষ্ট চিত্র ফুটে ওঠেনি। অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আরেক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম।

আলোকিত প্রতিদিন / ১১-০১-২০২৩

- Advertisement -
- Advertisement -