আজ মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

 সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মাদকের নিয়ন্ত্রণ করেন ইয়াবা সম্রাজ্ঞী মুক্তা 

-Advertisement-

আরো খবর

আব্দুল সাত্তার টিটু :
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার আরেফিন নগর মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাদকের কারণে পুরো এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ- হয়ে পড়ছেন মাদকাসক্ত, এমনটাই দাবি স্ব-স্ব আত্নীয় স্বজনদের।
মাদক ব্যবসায়ী মুক্তা ও তার স্বামী হযরত আলী দু’জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও অবৈধ মাদক কারবারিদের গডফাদার। তিনি পেশিশক্তি খাটিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। মাদক ব্যবসা করে আসছেন সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। মুক্তা এক সময় পতিতালয়ের ব্যবসা করলেও তিনি এখন সমাজের কোটিপতি মানুষদের মধ্যে একজন। তার রয়েছে অগনিত বহুতল ভবন ও ব্যাংক ভর্তি টাকা!
জানা যায়, মুক্তা ও তার স্বামী অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে ভীতি সৃষ্টি করে টেন্ডারবাজি, গরুর হাট দখল এবং চাঁদাবাজি করে স্বনামে-বেনামে বিপুল অর্থ–বৈভবের মালিক হয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে সিএমপির তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী মুক্তা ও তার স্বামী হযরত আলী, প্রকাশ মাদক আলী, মাদক সাম্রাজ্ঞী মুক্তার দেবর সোহাগ প্রকাশ ইয়াবা সোহাগ, কিশোর গ্যাং লিডার সোহাগ।মুক্তার আপন মেয়ে খুচরা মাদক বিক্রেতা আঁখি প্রকাশ গাঁজা আঁখি। এ নারীর ও তার স্বামী’র বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মাদকসহ বহু মামলা রয়েছে।
চক্রটি শুধু মাদকের ব্যবসা নয়, আরেফিন নগরে সিটি কর্পোরেশনের জমি দখল করে গড়ে তুলেছে কলোনি ও গরুর খামার। বায়েজিদের বিভিন্ন স্থানে জায়াগা ও বহু তলা ভবন নির্মাণ করেছে মাদকের টাকায়। এবং বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের একাউন্টে রয়েছে ব্যাংক ভর্তি টাকা।
মুক্তা ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারসহ মাদক বিক্রয় বন্ধ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকার বাসিন্দারা বেশ কয়েকবার।
অত্র এলাকাবাসীর অভিযোগ, আরেফিন নগরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দিনরাত অবাধে মাদক বিক্রি হচ্ছে। মুক্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের দ্বারায়। ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ শিক্ষা সমাজ ও উঠতি বয়সের কিশোর কিশোরীরা, ধ্বংস হচ্ছে জাতি।
এলাকার সচেতন নাগরিক অনেকেই অভিযোগ করেন থানা পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। যদিও মাঝেমধ্যে অভিযান করা হয়, তাতেও ক্ষান্ত হয়নি মাদক কারবারিরা। কে শুনে কার কথা মাদকসম্রাগী মুক্তা’র মাদকের ব্যবসা আগের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা জাঁকজমক রমরমা চলছে তো চলছে!
এলাকাবাসী আরো জানান আমাদের প্রতিবেদককে, মাদক ব্যবসায়ী স্বামী হযরত আলী প্রকাশ মাদক আলী’র হাত ধরেই মুক্তা মাদক ব্যবসায় আসে। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সখ্য।
বেশ কয়েকবার জেলে গেলেও দ্রুত জামিনে বের হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে মুক্তা ও মাদক আলী। বায়েজিদ থানার আরেফিন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান ঘিরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বসে মাদকের হাট। দিনের বেলায় যদিও একটু কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, তারা মাদক ও চোরাই গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিদ্যুৎ লাইন থেকে কাঁচাবাজার ও মাছের বাজারের তিন শতাধিক দোকানে অবৈধ সংযোগ দিয়ে মাসে ৫ লাখ চাঁদা তুলতেন। তাঁর সঙ্গে সরকার দলের নামধারী প্রভাবশালী নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সখ্য থাকায় বারবার অপরাধ করেও তিনি পার পেয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেতেন না। এখনো স্থানীয় বাসিন্দারা প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন।
যেখানে মাদকসেবী সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের শ্রমিক এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আনাগোনা চলে। মুক্তার সাথে আছে বেশ কিছু মাদক কারবারি রোহিঙ্গা,মুক্তা’র মাদক চক্রটি রোহিঙ্গা মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা এনে বায়েজিদ ও আরেফিন নগরে ইয়াবা ব্যবসা করছে, বলছেন অত্র এলাকাবাসী। মুক্তার দেবর ইয়াবা সোহাগের রয়েছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং কেউ যদি মাদকের বিরুদ্ধে কিছু বলতে যায় ঠিক তখনই তাকে গুনতে হয় হামলার শিকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মুক্তার সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পুলিশ অবগত থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ছিল অসহায়।
বেশ কয়েকবার মাদকসম্রাজ্ঞী মুক্তা ও তার স্বামী হযরত আলী’কে গ্রেফতার করেছিল বায়েজিদ থানা পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তিমতো বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় কবরস্থানের কবর খুঁড়েও উদ্ধার করা হয় মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল দেশীয় অস্ত্র।
বিভিন্ন মামলার নথি থেকে জানা গেছে, তার পরিবারের অনেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার মেয়ে আঁখি, স্বামী হযরত আলী দেবর ইয়াবা সোহাগ সহ নাম না জানা আরো বেশ কয়েকজন সিন্ডিকেট রয়েছে, কবরস্থানসহ অত্র এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বলে মুক্তা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও করা হয়েছে তাকে। তার পরিবারের অন্যদেরও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারপরও তাদের মাদক ব্যবসা থেকে ফেরানো যায়নি।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মোহাম্মদ ফেরদৌস জাহান বলেন, আমি এই থানায় এসেছি অল্প কয়েকদিন হল, যদি আমার এলাকায় কেউ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকে অবশ্যই তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। মুক্তা’র স্বামী ও মুক্তার পরিবার ছাড়াও তাদের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৩ নভেম্বর-২০২২/ মওম
- Advertisement -
- Advertisement -