রাশেদুজ্জামান তাওহীদ
ধরলার চরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে নিখোঁজের দুইদিন পর আজগার আলীকে (৬০) পাওয়া গেছে। তবে তিনি আর বেঁচে নেই। শনিবার সকালে ধরলা অববাহিকার উত্তর কদমতলা এলাকায় স্থানীয় দুই কৃষক নদীতে তার ভাসমান মরদেহ দেখতে পেয়ে যখন চরের কিনারে নিয়ে আসেন তখন আজগার আলী নিথর, মৃত। পরে সদর থানা পুলিশের একটি দল মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ।আজগার আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের নওয়াবশ গ্রামে। তার পরিবারে স্ত্রী এবং ছয় ছেলে মেয়ে ( তিন ছেলে তিন মেয়ে) রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে ধরলার চরে নিজের গরু নিয়ে ঘাস খাওয়াতে যান আজগার আলী। সেদিন সন্ধ্যার আগে তার গরুগুলো চেনা পথ ধরে নদী পার হয়ে বাড়িতে ফিরলেও আজগার ফেরেননি। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ দল অনুসন্ধান চালালেও খোঁজ মেলেনি আজগারের। এদিকে আজগারের মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজগারের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার আগে কেউ তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে থাকতে পারে। নিহতের বড় ছেলে আজিজুলের দাবি, তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি বলেন, ‘বাবার নিয়ে যাওয়া গরু স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ধান খাওয়ায় ওই ব্যক্তি ও তার ছেলে লাঠি দিয়ে বাবাকে আঘাত করেছিল। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় তিনি সেটা সহ্য করতে পারেন নি। এটা হত্যাকান্ড। তার শরীরে গলার কাছে আমি আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।’ এ ঘটনায় তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজসহ কয়েকজন বলেন,‘মরদেহের ঘাড়ে ও পাঁজরে বড়বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পরে স্থানীয়রা মরদেহ গামছা দিয়ে ঢেকে রাখেন।’ পাঁচগাছী ইউপির ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম সরকার ওয়াসিম বলেন,‘মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তিনি নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে মারপিঠ করা হয়েছে বলে ৪/৫ জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।’ বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য ওয়াসিম বলেন, ‘আজগার আলীর গরু স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ধান খাওয়ায় ওই ব্যক্তি নৌকায় করে গিয়ে আজগারকে একটি লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করে। এরপর নদী পার হওয়ার পথে আজগার হঠাৎ নদীতে হারিয়ে যায়। ‘স্থানীয় জেলেনুর হোসেনের বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য বলেন, ‘নৌকায় করে মাছ ধরার সময় তিনি দেখেছেন একজন লোক গরু নিয়ে নদী পার হচ্ছিল। হঠাৎ তিনি দেখতে পান গরু পার হচ্ছে কিন্তু লোকটি নাই।’ ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘ মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘ নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়না তদন্তের পর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন,‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়গুলি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
আলোকিত প্রতিদিন/ ০২ এপ্রিল, ২০২২/ মওম

