আজ শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।   ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ পবিত্র শবেবরাত 

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -
নিজেস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র শবেবরাত আজ। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় দিনটি পালন করবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে মসজিদ ও মাদরাসাগুলোয় বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া এবং মুনাজাতের আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। হিজরি ১৪ শাবান দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত পালন করা হয়। শবেবরাত ‘লাইলাতুল বরাত’ নামেও পরিচিত। ফার্সি শব্দ ‘শব’ অর্থ রাত। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। এ জন্য এ রাতকে ভাগ্য রজনীও বলা হয়। এ রাতে মহান আল্লাহর কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। অনেকেই এ রাতে নফল নামাজ এবং কুরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে পার করেন।এ ছাড়াও বাবা-মাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত এবং দোয়া করেন অনেকেই। পবিত্র শবে বরাত উম্মতে মুসলিমার নাজাত লাভের মাধ্যম। হযরত মোহাম্মদ (সা.) থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এ রাত মুসলিম উম্মাহর কাছে ‘নাজাতের উসিলা ও পবিত্র’ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। শবে বরাত মূলত ফার্সি শব্দ। এটি আরবী শব্দ নয় বলে পবিত্র কোরানে হুবহু ‘শবে বরাত’ শব্দের উল্লেখ নেই। যেমনটি নেই নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা ইত্যাদি। কিন্তু পবিত্র কোরানে সালাত, সওম ইত্যাদি দ্বারা যেমন নামাজ ও রোজা বুঝানো হয়েছে তদ্রুপ মহান আল্লাহ পাক সূরা দূখানের একটি আয়াতে ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ” দ্বারা ‘শবে বরাত’ বুঝিয়েছেন বলে মোফাসসেরিনে কেরাম ও সলফে সালেহীনগণের অভিমত।শব অর্থ রাত, ‘বরাআত’ অর্থ মুক্তি, ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাত অর্থ মুক্তি ও ভাগ্যের রাত। আরবীতে বরাআত এর আরেক অর্থ হলো বিচ্ছিন্নতা। যার সাথে অবস্থান অপছন্দনীয়, তার সঙ্গ হতে দূরে থাকা। [সূত্র: মুফরাদাতে ইমাম রাগেব, পৃষ্ঠা ৪৫] এই রাতের মর্যাদা উল্লেখ করে তাফসিরকারক আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রাহ.) তাফসীরে রুহুল বয়ানে বলেছেন, শবে কদরের মতই এই রাতে সৃষ্টি তথা বান্দাহর (অন্যান্য) প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত আরশের প্রতিটি কণা হতে ভূতলের গভীরে পৌঁছে। [রহুল বয়ান: ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০১] তিনি বলেন, এই রাতকে লাইলাতুর রহমতও বলা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- এ রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত নাযিল হয়। তিনি আরো বলেন, লাইলাতুল বরাত এ জন্য বলা হয় যে, খাজনা আদায়কারী খাজনা পাওয়ার পর যেভাবে ছাড়পত্র দিলে খাজনা দানকারী সব ধরনের শাস্তি হতে মুক্তি পায়, অনুরূপভাবে এ রাতে বান্দা গুনাহ মুক্ত হয়ে সকল পাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে নিজেকে মুক্ত করে। [তাফসীরে রহুল বয়ান: ৪ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৪] শবে বরাত সম্পর্কে সুনানে ইবনে মাযা শরীফে হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেছেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মধ্য শাবানের রাতে তার দৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক এবং বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতিত সকলকে ক্ষমা করে দেন। হযরত ওসামা ইবনে যায়দ (রা.) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রসূল আপনি শাবান মাসে যত বেশি রোযা রাখেন, জন্য কোন মাসে আপনাকে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনা এর কারণ কি? তখন রাসূল (সা.) এরশাদ করলেন এ মাস রজব ও রমজানের মাঝামাঝি। এ মাস সম্পর্কে মানুষ গাফেল বা উদাসীন রয়েছে। এ মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল উঠানো হয়। আমি পছন্দ করি আমার আমলসমূহ তখন এমন অবস্থায় উঠানো হোক যে, আমি রোযাদার। [কানযুল উম্মাল দুররে মানসূর: ৭ম খণ্ড, ৪০১পৃষ্ঠা] শবে বরাতের রোযা রাখা অধিকতর সাওয়াবের কাজ। হাদিসে আছে, যখন শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিনগত রজনী আসবে। তোমরা রাতে নামাযের জন্য দাঁড়াবে (রাত জেগে ইবাদত করবে) আর দিনে রোযা রাখবে। [ইবনু মাজাহ্: খণ্ড ১ম, পৃষ্ঠা ৪৪৪]তবে এই মহিমান্বিত রাতে কোনোভাবেই রাস্তাঘাটে আনন্দ উৎসব, অহেতুক ঘোরাঘুরি এবং আতশবাজি ইত্যাদি করা উচিত নয়। এতে পবিত্রতাতো নষ্ট হবেই, যে ব্যক্তি এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকে তিনি অভিশপ্ত হন। যত সম্ভব একাগ্রচিত্তে নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, প্রিয় হাবিবের প্রতি দরুদ পড়া, কান্নাকাটি করে নিজের গুনাহ মাফ করানো, অন্যের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা, সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্যেই শবে বরাতের সার্থকতা। মহান আল্লাহ পাক আমাদের ইসলামী শরিয়ত মতে খালেস নিয়্যতে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে শবে বরাত পালন এবং উত্তম আমলের তওফিক দিন। আমিন।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ মার্চ, ২০২২/ মওম

 

- Advertisement -
- Advertisement -