প্লে (অরেঞ্জ), ডেনমার্ক (অরেঞ্জ) ও স্ট্রং গোল্ড (ইয়েলো)। এরই মধ্যে টিউলিপ ফুলে বাগান ভরে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকায় টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রমাণ করেছেন এসব চাষি।পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন তারা। বর্তমানে প্রতিটি ফুল ১০০ টাকা দরে বাগান থেকে বিক্রি হচ্ছে। বছরের অন্য সময় এসব জমিতে দেশি-বিদেশি অন্য ফুল চাষ করবেন চাষিরা। পাশাপাশি ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটকদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রবেশ মূল্য। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক মূল্যে দেখার সুযোগ রয়েছে। এই থেকেও তারা বাড়তি আয় করতে পারছেন।টিউলিপ উৎপাদনে সফল হওয়ায় ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ সম্প্রসারণ করলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানির সুযোগ রয়েছে। এতে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। ফুল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হলে আগামী বছর প্রায় ৫ একর জমিতে টিউলিপের চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা। মোর্শেদা বেগম বলেন, গাছ লাগানোর পর ফুল ফুটবে কিনা এ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ইএসডিও এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শে ১৬ দিনের পরিচর্যায় ফুলের কলি আসে। ২০-২৪ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। অধিকাংশ গাছে ফুল ফুটেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বাকি গাছেও ফুল ফুটবে।আয়েশা বেগম বলেন, টিউলিপ চাষের প্রধান অন্তরায় এই ফুলের বীজ আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আনতে হয়। এতে অনেক টাকা শুল্ক লাগে। শুল্কমুক্ত বীজ আমদানি করতে পারলে ফুলের চাষ বাড়বে।মুক্তা বেগম জানান, সরকারিভাবে বিদেশ থেকে কম দামে টিউলিপের বীজ সরবরাহ করলে ফুলের চাষাবাদ বাড়বে। চাষিরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি টিউলিপের বীজ ৬২ টাকায় নেদারল্যান্ডস থেকে কেনা হয়েছে। বীজের পাশাপাশি চাষিদের বিনামূল্যে রাসায়নিক সার, জৈব সার, খৈল, শেডনেট, ফেন্সিংনেটসহ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে আরও এক হাজার চাষিকে টিউলিপ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে। চাষিদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমানো, বাণিজ্যিকভিত্তিতে টিউলিপ চাষ, পর্যটনে উদ্ধুদ্ধ করা, উৎপাদিত ফুল ও বীজ সংরক্ষণ করা, সারাদেশে ফুল সরবরাহ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের সক্ষমতা বৃদ্ধিই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, তেঁতুলিয়ায় এটাই প্রথম টিউলিপ ফুল চাষ। এটি সাফল্য পেয়েছে। আগামীতে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র চাষিদের অর্থনৈতিক আয় এবং সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ অপূর্ব নৈসর্গিক যেসব পর্যটন শিল্প রয়েছে, সেগুলো আরও সম্প্রসারিত হবে। এটি এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও বলেন, দিনের বেলায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফুল চাষ সহনশীল। বীজ রোপণের দিন হতে ১৮-২০ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ৬০ দিন পর্যন্ত এই ফুল স্থায়ী থাকে। বেশ কয়েকটি দেশ এই ফুল রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। যেহেতু এই ফুল চাষে এখানকার চাষিরা সফল হয়েছেন সেহেতু বাণিজ্যিকভাবে চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।



ইএসডিও প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. আইনুল হক বলেন, পিকেএসএফের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইএসডিও তেঁতুলিয়ায় ৪০ শতক জমিতে চাষিদের দিয়ে ৪০ হাজার টিউলিপ বীজ রোপণ করায়। এরই মধ্যে সব বাগানে ফুল ফুটেছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া কাজে লাগিয়ে যে টিউলিপ ফুল চাষ শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি আমরা। কৃষকদের অনুপ্রাণিত করা, ফুলের চাষাবাদ পদ্ধতি এবং রোগবালাই পোকা মাকড় দমনের পরামর্শ অব্যাহত রেখেছি। আশার খবর এক মাসেই সবগুলো গাছে ফুল ফুটেছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, তেঁতুলিয়ায় এটি কৃষি বাণিজ্যের এবং পর্যটনের নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে। উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়াকে সমতলের চায়ের যে রাজধানী বলা হয়, সেটির পাশাপাশি ফুলেরও রাজধানী হয়ে উঠবে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ড. আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিকেএসএফ দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে আসছে। এর পাশাপাশি পিকেএসএফ বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চমূল্যের ফুল ও ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এরই অংশ হিসেবে তেঁতুলিয়ায় টিউলিপ ফুল চাষ করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকার চাষিরা একদিকে উচ্চমূল্য পাবেন অন্যদিকে ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমেও লাভবান হবেন। শুধু তেঁতুলিয়ায় নয়, গোটা জেলায় এই ফুল চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। আশা করছি, একসময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে টিউলিপ রফতানি বরতে পারবো আমরা।