আহসানুল ইসলাম আমিন
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে জলাশয়ে নিষিদ্ধ ভেসাল ও বাধ দিয়ে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব চলছে । এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি না থাকায় বর্ষার পানি নদ-নদী,খাল-বিল থেকে কমতে থাকায় জেলেরা নিষিদ্ধ ভেসাল ও বাধ দিয়ে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধন করছে। আর হাট-বাজার পাড়া-মহল্লা গুলোতে পোনা মাছ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি সন্ধ্যার পর থানার সামনে পসরা বসে পোনা মাছ বিক্রি করছে। কেউ নিষেধ করার মত নেই। এর ফলে আনন্দমুখর পরিবেশে এ মাছ বিক্রি করছে জেলেরা।
গত শুক্রবার বিকালে সরেজমিন দেখা গেছে,উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের ব্রিজের নিচে বাধ দিয়ে ভেসার বসিয়ে এ মাছ নিধন করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার শেখরনগর, রাজানগর চিত্রকুট,বয়রাগাদী, লতব্দী, মালখানগর, জৈনসার, মধ্যপাড়া সহ ১৪ ইউনিয়নের খাল-বিলে অবাধ মাছের চলাফেরার রাস্তায় ভেসাল দিয়ে এই পোনা মাছ গুলো নিধন করছে। পোনা গুলো বড় হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না তারা। এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারীরা সরকার নিষিদ্ধ ভেসাল, কারেন্ট জাল, মশারি, বাদাই জাল ও মাছ ধরার নানা উপকরণ দিয়ে অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন করছে। কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা মানছে না তারা। এমনকি নদী খাল ফসলি জমিতে বর জাল দিয়েও মাছ শিকার করছে। এ সব মাছ হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করার সুযোগ পাওয়ায় উপজেলার নদী, খাল-বিলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা যায়, উপজেলা মৎস্য অফিস কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেশীয় প্রজাতির নানা প্রকার মাছ এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নদী-খাল-বিলে আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। আগে উন্মুক্ত জলাশয়ে, কৈ, শিং, মাগুর, সরপুটি, টেংড়া, বাতাসি, খৈলসা, টাকি, মলা, ঢেলা, তপসিসহ নানা প্রকার মাছ পাওয়া যেত। আগামী প্রজন্মকে মাছের জাদুঘরে ছবি দেখিয়ে বলতে হবে এগুলো আমাদের হারিয়ে যাওয়া দেশী মাছের ছবি। আগে নদী-খাল-পুকুরে বড় মাছের মধ্যে রুই-কাতল-মৃগেল, কালিবাউস, আইড়, শোল, বোয়াল পাওয়া যেত। এখন চাষ ছাড়া পাওয়াই না। কোন নদীতে পাওয়া গেলে তাও যে দাম সাধারণ মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব না। উপজেলা মৎস্য অফিস যদি একটু তৎপর হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এখনো কিছু রক্ষা করা সম্ভব। বয়রাগাদী ইউনিয়নের বাসিন্দা আল মামুন জানান, সরকার নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন করে হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি করছে জেলেরা। উপজেলা প্রশাসন ঠিক মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাছ নিধন বন্ধ হয় না। মা ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ করা যায় তবে আমরা বড় মাছ অনেক দাম দিয়ে কিনে খেতে হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ইছামতী নদীর মৎস্য শিকারী মমিনুল শেখ বলেন, বর্ষার পানি কমতে থাকায় আমরা মাছ ধরছি। আমরা বর্ষা মৌসুমে শুধু মাছ ধরি, অন্য সময় ধরি না। এখন পানি চলে যাচ্ছে সে কারণে আমরা এই মাছ ধরছি। উপজেলার শেখরনগরে ইঞ্জিল বাহিত নৌকা চালক খাইরুদ্দিন জানান, নদী খাল-বিলে জেলেরা জাল পেতে রাখায় ইঞ্জিল বাহিত নৌকা নিয়ে যাতায়াত দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রায় সময়েই জরিমানা গুনতে হয় আমাদের। কখনো কখনো ঝগড়াও হাতাহাতি হয়ে যায়। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) যুধিষ্ঠির রঞ্জন পাল বলেন, আমরা ৩০ তারিখের পরে জলাশয়ে বাধ দিয়ে মাছ নিধনে এসব অবৈধ ভেসাল সহ সব ধরনের জাল উচ্ছেদ করাবো। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) স্যারের সাছে আলাপ-আলোচনা করে তারপর আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাবো।
আলোকিত প্রতিদিন/ ০২অক্টোবর,২০২১/ এইচ