খালেদ হাসান
গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে চাঞ্চল্যকর খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ০৫ জন পেশাদার ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১৪। আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আকুয়া বাইপাসে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ১৪ এর অধিনায়কের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। প্রেস বিফিংয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটলিয়নÑ১৪ এর অধিনায়ক ওইং কমান্ডার মোঃ রুকুনজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই শ্লোগান নিয়ে জন্ম হয় র্যাপি এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাব বাংলাদেশের মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। জঙ্গিবাদ, মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদ, ছিনতাই, ডাকাতি, জুয়া, প্রতারক চক্র, অপহরণ, খুন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড থেকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন দেশব্যাপী আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ঘটনার বিবরণে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রিঃ রাত অনুমান ০৯:৫০ ঘটিকার সময় ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন জামালপুর স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের যাত্রীরা ট্রেনের ছাদ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে ট্রেনের ছাদ থেকে গুরুতর আহত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। আহতদের তাৎক্ষণিক হাসপাতলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকে মৃত ঘোষণা করে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে ডাকাতির মাধ্যমে তাদের হত্যা করা হয়। উক্ত ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলার রেলওয়ে থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয় যার মামলা নংÑ০৫/১৩, তারিখÑ২৪/০৯/২০২১ খ্রিঃ ধারাÑ ৩৯৬ পেনাল কোড। এই ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।’ উক্ত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনা সংঘটনের সাথে সাথেই র্যাবÑ১৪, ময়মনসিংহ গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। ঘটনাস্থর পরিদর্শন, পারিপার্শ্বিকতার বিচার ও নিহতদের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে নিবিড় তদন্তপূর্বক র্যাবÑ১৪ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবÑ১৪ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১। আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬)Ñকে ময়মনসিংহের শিকারীকান্দা এলাকা থেকে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে অদ্য ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখ রাত আনুমানিক ০১:০০ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করে এবং তার কাছ থেকে লুণ্ঠন হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চেইন অপারেশনের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী ২। মাকসুদুল হক রিশাদ (২৮), পিতাÑ মনজু, সাংÑ বাঘমারা, ৩। মোঃ হাসান (২২), পিতাÑ সাব্বির খান, সাংÑ বাঘমারা, ৪। রুবেল মিয়া (৩১), পিতাÑ মৃত আশরাফ আলী, সাংÑ ধামাই, ৫। মোহাম্মদ (২৫), পিতাÑ সাব্বির খান, সাংÑ বাঘমারা, সর্ব থানাÑ কোতোয়ালী, জেলাÑময়মনসিংহদের গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে, তাদের দেখানো জায়গা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ০৪ (চার) জন পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সাথে যোগ দেয় মোহাম্মদ ও তার একজন সহযোগী। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগি’র ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির এক পর্যায়ে ভিক্টিম মৃত মোঃ সাগর মিয়া ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুর হয় এবং ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে ভিক্টিমদ্বয়ের মাথায় এলোপাথারীভাবে আঘাত করে। মৃত সাগর ও নাহিদ যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়ে তখন ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢোকার পূর্বে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন হতে নেমে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং এই চক্র নিয়মিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন হতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত। ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। তারা ছোট ছোট উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করত। এই ছোট ছোট উপ-গ্রুপগুলো কেউ টার্গেট শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুণ্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত আর বাকীরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্ব-নির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত। উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রিশাদ, স্বাধীন, মোহাম্মদ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল, হাসান টার্গেট শনাক্তের কাজে যুক্ত ছিল, রুবেল লুণ্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল স্বল্পমূল্যে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং অন্যদের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করত। পাশাপামি সে এই চক্রের পৃষ্ঠপোষক বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা। তার নামে ময়মনসিংহ রেলওয়ে এবং কোতোয়ালী থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এই ডাকাতির ঘটনায় সকল আসামীদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে র্যাবÑ১৪ এর অধিনায়ক মোঃ রুকুনুজ্জামান জানান।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৬ সেপ্টেম্বর,২০২১/ এইচ