আজ শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শামীমা ইয়াসমিন হলি’র ছোটগল্প: ভার্চুয়াল প্রেম

-Advertisement-

আরো খবর

ভার্চুয়াল প্রেম
শামীমা ইয়াসমিন হলি
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ছেলেটি নাম সুদর্শন। দেখতেও সে সুদর্শন বটে। বাড়ি থেকে তার বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ চলছে। তবে সে কোনক্রমেই বিয়েতে রাজি নয়। তোমরা আবার বাড়ির লোকেদের মত মনে মনে যা ভাবছো! মানে প্রেম বিষয়ক। বিষয়টি আসলে তেমনও নয়। একটু সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে বুঝবে চলতি হাওয়ার ছোকরা-ছুকড়িদল সনাতন নিয়মে অভিভাবকের সিদ্ধান্তে ঠিক আস্থা রাখতে অনাস্থায় ভোগে। তারা চায় তাদের স্বপ্নিল প্রেয়সী নিজের কল্পনা থেকে বাস্তবে এসে ধরা দিক। হন্যে হয়ে খুঁজে ফেরে ভার্চুয়াল জগতের সুন্দর সৃজনশীল ছবির মানুষটিরে আপন করবার ভাবনার পিছে। এমনি করে সময়ের সাথে প্রজন্মের এই বিশেষ শ্রেণীর বয়স সম্মুখে বয়ে চলে। সুদর্শন হঠাৎ সেই ললনার সাক্ষাৎ পেলো। তারে বললো সে, এতদিন কোথায় ছিলে! মুহূর্তের বিস্মিত বাক্যে যেন সে বোঝালে, তুমিহীনা আমার অদৃশ্য শূন্যতা কেউ বোঝে না কেউ দেখে না। অতঃপর প্রেয়সীরে তার সঙ্গী হবার আমন্ত্রণ। সে আমন্ত্রণে সাড়া না দেবার সাধ্য কার? দোঁহে ছুটে চলে স্বপ্নরাজ্যে। তারা বাইসাইকেল চেপে শহর থেকে সুদূরের পথে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে চলতে থাকে। সুদর্শন মনে মনে তার প্রেয়সীর লাগি নামও করেছে স্থির। যখন তারে বললো ডেকে, কাশবনে আমারি সনে হারাবে হে প্রিয়ে? উত্তর অস্ফুট। আবার বললে, ওগো অস্পৃশ্যা উত্তর কহ! বালিকা বলে, অস্পৃশ্যা কারো নাম হয় বুঝি? সুদর্শন বললে, নিশ্চয়ই হয়! তুমি আমার অস্পৃশ্যা। কাশবনে প্রকৃতির কোলে বিমুগ্ধ কপোত-কপোতী। তাদের বেখেয়াল মন এবার পবনের গতিতে বয়ে চলা নাওয়ের সঙ্গী। তাদের সনে বয়ে চলে শুভ্র মেঘদল,সর্পিল নদীজল,জলজ জীবকুল,শীতল সমীরণ,পাখির ঝাঁক আরো কত কি! অস্তগামী সূর্যের সনে মেঘের লুকোচুরিতে প্রেমময় সত্তার কি অপূর্ব সৌন্দর্যে প্রকাশ। বেলা ফুরবার আগেই মেঘে মেঘে ঘর্ষণে প্রকৃতির চকিত শব্দচয়ন। বর্ষণ সম্ভাবনায় ময়ূরের মত এই প্রেমিক যুগলের বহুদিনের স্বপ্ন আজ সফল হতে যাচ্ছে, তারা বৃষ্টিস্নাত সাইক্লিংয়ের তৃপ্তস্বাদ আস্বাদনে নিজেদের করেছে প্রকৃতির মাঝে লীন। এবার অবশ্য অস্পৃশ্যা স্থান পরিবর্তন করে পেছন হতে সুদর্শনের সামনে বসে সাইকেলের সম্মুখ চাকার সাথে সখ্যতায় সুদর্শনরে সাথে লয়ে প্রেমময় জগতের হাতসানি পানে এগিয়ে চলে। অনুভবে কড়া নেড়ে কয় সুদর্শন বুঝি পিঠে ঝোলানো ব্যাকপ্যাক বৃষ্টির নজর এড়াতে আপন বক্ষে দিয়েছে ঠাঁই। বক্ষের কাছে প্রিয়ারে লয়ে বৃষ্টির সাথে রোমান্টিকতার ভেলায় ছুটে চলে আনমনা গন্তব্যহীন দিগ্বিদিক। চলতি পথে চকিতে বিদ্যুৎ চমকে পথরেখা পায় খুঁজি। চকিত গর্জনে ভীরু মনে নিবিড় আলিঙ্গন। মনুষ্য,প্রেম আর প্রকৃতির সম্মিলন এখানে হয়েছে একাকার। বৃষ্টির ছন্দে বার্ধক্য আগমনে অস্পৃশ্যা সুদর্শনের সম্বিত ফিরলো। তাদের গৃহপানে ফেরার ধারণা বোধে হলো। কিন্তু হায় কি করে ফিরবে একেলা! এমন ভাবনার মাঝেও হঠাৎ বৃষ্টির পানিতে চা পানের তৃষ্ণা মাথায় ভর করতেই ওমনি ছুট টঙ দোকানের সন্ধানে। স্বপ্নাতুর এ তৃষাও মিটলো তাদের। এবার নীড়ে ফেরবার বিদায়লগ্ন। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে তারা ক্লান্ত। রাত্রি শেষের পথে। কন্যাটি বললো, ভালোবাসায় আমি একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসি; তোমার কি মত? সুদর্শন পড়লো ভাবনায়। কেননা সে গণতন্ত্র চায় ভালোবাসায়। সে নিত্য নতুন প্রেমে পড়তে চায়। ফুল,ফল,লতাপাতা,নদী,পাহাড়,সমুদ্র,জীব-জড়, দৃশ্য-অদৃশ্য,স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য সকলেরে সে আবিষ্কার করে প্রেমময় ভাবনায়। সর্বস্ব উজার করে ক্ষণিকের তরে আপনারে একাকার করে তবু সে একজনমের পুরোটা সময় কারো একান্ত আপন হবার নয়। সে চায় মুক্ত বিহঙ্গের মত স্বাধীন আকাশ, ডানা মেলে মুক্তধারায় বিচরন করবে বিচিত্র শৈল্পিক ভালোবাসার সত্তায়। সে আত্নভোলা পথিক হয়ে জীবনাতিপাতে স্বভাবজাত। তারে জনমের তরে বাঁধনে বাঁধবে সাধ্য কার! সে কারো একজনমে একার হবার নয়। সুখকর স্বর্গ হতে অভিমান রাজ্যে পতিত হলো অস্পৃশ্যা। তৎক্ষণাৎ চকিতে তাদের সম্বিত এলো ফিরে, তারা বাস্তবতার বর্তমান রূপ বুঝতে পারলো। তাদের ভার্চুয়াল কথোপকথনে যে রোমান্টিক প্রেমের আবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো তা কোন পরিণতির পথ পাচ্ছে না। সুদর্শন জানতো সে কারো একান্ত হবার নয়, তাই সে মনের গহনে অস্পৃশ্যা নামকরণে স্বার্থক শব্দ বাছাইয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। সে জানতো অনলাইনের ওপাশে রজনীর এই মায়াবী রমণীর হস্ত স্পর্শ করে পাশাপাশি হেঁটে কখনও অজানায় নিরুদ্দেশ হতে পারবে না। হয়তো পথিমধ্যে মোহভঙ্গে মন নব প্রেমের পথে হবে ধাবিত। তাই প্রেমময়ী তার কাছে অস্পৃশ্যাই রয়ে গেলো। না হলো তাদের হাতে হাত রেখে সুদীর্ঘ পদযাত্রা। হলোইবা সেই স্বপ্নিল স্বর্গীয় প্রেমভঙ্গ। নাইবা হলো একজনমে তারা একান্ত আপনার। কিন্তু তাই বলে কি তাদের দেখা হবে না কোন এক বসন্তে! হয়তো হবে নতুবা না।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১/ দ ম দ
- Advertisement -
- Advertisement -