মুসলেহ উদ্দীন, সীতাকুণ্ডঃ
চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ডে সরকারী নিষেধাজ্ঞা উঠার পর পর ইলিশ ধরা শুরু করে স্থানীয় জেলেরা। এসময় সমুদ্রে জাল ফেললেই নৌকায় উঠতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ। এ বছর শুরুর দিকে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে থাকায় আনন্দের কমতি ছিল না তাদের। এ অবস্থায় ২-১ দিন মাছ ধরা পড়ার পরই ঢালা পড়ার আগ মুহুর্তে হঠাৎ মাছ পড়া বন্ধ কমে যায়। তারপরও জেলেরা থেমে থাকেনি, আশায় বুক বাঁধে পরবর্তী জোঁয়া নিয়ে। কিন্তু তাতেও জালে মাছ না পড়ায় জেলেদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এই ভরা মৌসুমে জেলেরা থাকার কথা আনন্দে কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পেয়ে হতাশায় জেলে পল্লী। মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় ধার-দেনার ভারে ভাজ পড়েছে অভাবগ্রস্ত জেলে পরিবারে। উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম সমূদ্র উপকুলীয় এলাকা হওয়ায় প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে জেলে পাড়া। সমুদ্রে মাছ ধরা অধিকাংশ জেলের অন্যতম পেশা। সংসারের বরন-পোষণ সবই মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার জেলে মাছ ধরা পেশায় অতপ্রতভাবে জড়িত রয়েছে। এসব জেলেরা সারা বছর সমুদ্রের মাছে সংসার চালালেও ইলিশের মৌসুমে নবান্নের উৎসব নামে জেলে পাড়ায়। ইলিশের মৌসুমে সকল অভাব দুর করে নতুন আসবাবপত্র এবং নতুন জামা কেনার আশায় বুক বাঁধে জেলে পরিবারে। কিন্তু এ বছর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে সকল আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। অনেকটা বেকার জীবন কাটাতে হচ্ছে কর্মরত জেলেদের। প্রতিটি ঘাটে নিথরভাবে পড়ে রয়েছে ১-২’শ ছোট-বড় নৌকা। পাড়ে বসে পানির দিকে তাকিয়ে দিন পার করছে জেলেরা। স্থানীয় জেলেরা বলেন, এ বছর অতি বৃষ্টির কারনে নদীতে জোয়ারের মাত্রা বেশী হওয়ায় পানি কম থাকায় শুরুতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরে অধিকাংশ সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে সীমাহীন কষ্টে জীবন কাটে। ইলিশের মৌসুম আসলে মাছ ধরে কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করি। কিন্তু ইলিশের ভরা মৌসুম হওয়া সত্তেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না সমুদ্রে। বৈরী আবহাওয়ায় সাগর হতে মাছ আসতে না পারায় জ্বালে মাছ পড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আবারো পড়ে যাবে নিষেধাজ্ঞা। এ অবস্থায় অভাব অনটনের সংসারে আরো দুর্ভোগ দেখা দিবে বলে জানান তারা। এদিকে ভরা মৌসুমেও ইলিশের অভাব দেখা দেয়ায় অনেকটা মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে হাট-বাজার। গ্রামে-গঞ্জে নেই ইলিশের মৌ-মৌ গন্ধ। মাছ সংকটে বিগত বছরগুলোর নেয় সমূদ্র পাড়ে মিলছে না ইলিশের হাট। ইলিশের আশায় সাগর পাড়ে ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেলেও মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা। সমূদ্র পাড়ের ক্রেতারা বলেন, টাটকা মাছের জন্য সাগড় পাড় থেকে মাছ কিনতে আসা। এখান থেকে মাছ কিনতে আনন্দ পাওয়া যায়। নানা আকৃতির মাছ সাঁজিয়ে পাড়ে বসে বিক্রেতারা। ছোট-বড় মিশ্রিত মাছ কেনা যায় অল্পমুল্যে। কিন্তু এ বছর মৌসুমের মাঝ পর্যায়ে পৌছলেও মিলছে না ইলিশ। প্রতিদিন পাড়ে এসে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বলে জানান তারা। এ বছর সমূদ্রে ইলিশের সংকট তৈরী হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। গত বছর ইলিশের মৌসুমে ২২৭৬ মেট্রিক টন ধরা পড়ে সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে।কিন্তু এবার বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরা না পড়ায় লক্ষমাত্রা অনুযায়ী মাছ আহরন সম্ভব না ও হতে পারে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামীম আহাম্মেদ। তিনি বলেন, অতি বৃষ্টির ফলে মিঠা পানির পরিমান বেশী থাকায় উপরের দিকে মাছ আসছে না। তাছাড়া শিল্প-কারখানার দুষণ বেড়ে যাওয়ায় মাছ নিচে নেমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২১ আগস্ট ২০২১/ এইচ
- Advertisement -


