আজ শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের চেষ্টা 

-Advertisement-

আরো খবর

প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চালিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা করছে কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী চক্র। সম্প্রতি একটি তুচ্ছ ঘটনাকে পুজি করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন একটি পরিবার, আর এই সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি অবান্তর তথ্যের মাধ্যমে ভিত্তিহীনভাবে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে ধরেন তারা। ভুক্তভোগী পরিবারটি ফটিকছড়ি উপজেলার ১৩ নং লেলাং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডস্থ বনিক পাড়ার বাসিন্দা বিগত দীর্ঘদিন যাবত তাদের চাচাত ভাই সম্পর্কীত প্রতিবেশীর সাথে জমিজমা নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।
এই মামলার অংশ হিসেবে মহামান্য আদালত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছে জমি সম্পর্কে একটি তদন্ত প্রতিবেদন চাইলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান তিনজন ওয়ার্ড মেম্বার সমন্বয়ে একটি কমিটি করে একজন মুন্সী দ্বারা ভূমি জরিপ পূর্বক একটি প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন, প্রতিবেদনটি বাদীপক্ষের মনপুত নাহলে তারা ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে দায়ী করে এলাকায় বিভিন্ন অবান্তর ও সমালোচনা মূলক মন্তব্য করেন বলে সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়। পরবর্তীতে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের অনুরোধে চেয়ারম্যান এর মধ্যস্থতায় বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত একটি সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধ করলে উভয় পক্ষ সালিসি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন বলে ঐক্যমত পোষণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় দুই পক্ষকে একজন করে আইনজীবী, একজন সার্ভেয়ার/মুন্সী এবং ইউনিয়ন পরিষদের একজন সার্ভেয়ার/মুন্সী দ্বারা জরিপ করে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়ে যথাযথ তারিখে সময়মত উপস্থিত থাকতে বলা হলেও বাদীপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থেকেন।
উল্লেখ্য বিষয় হলো বাদীপক্ষের এক ভাই শহরে ব্যবসা করেন, একাধিক বার বাড়িতে গেলেও সালিসি বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বাদীপক্ষের দুই ভাই বাড়িতে উপস্থিত আছেন বলে জানতে চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার/গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ডেকে পাঠালে তারা চৌকিদারদের অশালীন ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। যেহেতু বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের অনুরোধে চেয়ারম্যান মধ্যস্থতায় সমাধানের চেষ্টা করেন তারাই চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন ভাবে গালিগালাজ করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বকাবকি করেন। একপর্যায়ে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য তিনি অবিভাবকের ভূমিকায় একটি থাপ্পড় দিয়ে বিষয়টা সুষ্ঠুভাবে সমাধানের কথা বলেন অন্যথায় আদালতের রায়ে যা হবে তা-ই মেনে নিতে হবে বলে চেয়ারম্যান তারাবীর নামাজের সময় হলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে মাসজিদে চলে যান। উল্লেখ থাকে যে, যেহেতু তাদের গ্রাম পুলিশ দিয়ে ডেকে পাঠানো হয় তাই বণিক পাড়ার মহল্লার সদ্দার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ চেয়ারম্যানের বাড়িতে উপস্থিত হয়েই পরবর্তীতে বিষয়টা সমাধান করে নিতে উদ্যোগ নিবেন বলে সবাইকে নিয়ে চলে আসেন। পরবর্তীতে এই তুচ্ছ বিষয়টা পুঁজি করে স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফায়দা হাসিল এবং চেয়ারম্যানের সম্মানহানীর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন  উস্কানি দিয়ে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিনত করতে অপচেষ্টা চালায়। এরই  ধারাবাহিকতায় চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলন, বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি প্রেরণ সহ অসত্য, ভিত্তিহীন মিথ্যচার সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা। ইতিমধ্যেই লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন শাহীন জেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত পরিচালনা জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
উপরোল্লেখিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন শাহীন বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯ নং বণিক পাড়ার দুটি পরিবারের পারিবারিক জমিজমা সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত মহামান্য আদালত ইউনিয়ন পরিষদে পাঠালে যথাযথ মাধ্যমে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের অনুরোধে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে তাদের একাধিক বার বৈঠকের সময় দিয়েও সাড়া না পাওয়ায় তাদের ডাকা হলে তারা অসংলগ্ন এবং অসৌজন্য মূলক আচরন করে, আর তাদেরকে মারধরের ঘটনা সম্পর্কে আপনারা খোঁজ খবর নিয়ে প্রকৃত ঘটনার সত্যতা গণমাধ্যমে তুলে ধরবেন বলে আশা করছি। এছাড়াও এই ঘটনার বিষয় নিয়ে বণিক পাড়ার মহল্লার সদ্দার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে জানতে চাইলে তারা বিষয়টা অতিরঞ্জিত এবং অবান্তর বলে মন্তব্য করেন এবং তারা সঠিক তথ্য তুলে ধরতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বণিক পাড়ার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমর কান্তি দে তিনি লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর উদ্যোগে বিভিন্ন মন্দির, আশ্রমের  উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি উপরোল্লেখিত বিষয়টা ভিত্তিহীন মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, এটি সমগ্র ইউনিয়নের হিন্দু মুসলিম উভয়ের মধ্যে বিরাজমান দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির সম্পর্ক বিনষ্টকরনের পায়তারা বলে মনে করছি। এই প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ জমিজমা সংক্রান্ত চলমান মামলা মোকদ্দমায় একজন নিরপরাধ গ্রাম্য পশু ডাক্তারকে পর্যন্ত আসামি করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যেহেতু পশু ডাক্তার অমল নাথ আনোয়ারা থানার বাসিন্দা তিনি চাকরি সূত্রে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মামলার বিবাদী বেনু ধরের বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবত ভাড়ায় থাকেন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বলেন , আমি একজন সাধারণ মানুষ পেশায় গ্রামীণ পশু ডাক্তারের চাকরি করে আসছি এবং আদালতের উপর আস্থা রয়েছে আমি ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি। এছাড়াও মামলার প্রধান বিবাদী বেনু ধর বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষের সম্পত্তি নিয়ে মামলায় অভিযুক্ত হওয়া আশ্চর্যের ব্যাপার যেহেতু পারিবারিক সম্পদের বন্টন ব্যবস্থা স্থানীয়ভাবেই করা যায় যদি পারিবারিক সহাবস্থানে ইচ্ছুক থাকে অন্যথায় মামলা মোকদ্দমা করে হয়রানি করা স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রকৃতপক্ষে বণিক পাড়ার সাধারণ মানুষ এই ঘটনা নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করেন, কেননা সুজন ধর এই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে যা করছে তারজন্য ভবিষ্যতে পাড়ার সাধারণ মানুষ ভোগান্তির পাশাপাশি সামাজিক ভাবে নিগৃহীত হতে পারে বলে মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, ইতিপূর্বে সুজন ধর মদসহ পুলিশের হাতে আটক সহ পাড়ায় তার উগ্র স্বভাবের জন্য বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে এমনকি নিজের বড় ভাইয়ের বউকে ইটের আঘাতে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে বলে জানান। এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন শাহীন একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সমগ্র ফটিকছড়িতে তার সুনাম রয়েছে। তার সময়ে এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে যা পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, এছাড়াও বিগত করোনাকালীন সময়ে সরকারের বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এলাকাবাসির জন্য খাদ্য, চিকিৎসা এমনকি নগদ অর্থ দিয়েও সাহায্য সহযোগিতা করে গেছেন যা ইতিপূর্বে কখনো ঘটেনি। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ইতিমধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন শাহীনকে বিতর্কিত করতে একটি মহল বিভিন্ন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত এই ঘটনাটি তারই অংশ কিনা তা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে তদন্তের আহ্বান জানান এলাকার সাধারণ মানুষ।
আলোকিত প্রতিদিন / সা হা
- Advertisement -
- Advertisement -