আজ শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অল্পে শেষ হওয়া জীবনের গল্প । সোলায়মান আহসান

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

(সাভারে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে)

অল্পে শেষ হওয়া জীবনের গল্প
সোলায়মান আহসান

জীবনের গল্প এতো অল্পেতে ফুরিয়ে যায় কীভাবে?

যারা চেয়েছিলো শরীরের লোনা ঘামে ভিজিয়ে নিজ জামা-
একটি সুবোধ সুঠাম সুন্দর জীবনের গল্প রচনা করতে;
চেয়েছিলো নিপুণ হাতে বুনতে সুখের নকশীকাঁথা
চোখে-মুখে ছিলো কী তেজ তাদের- যেন সূর্যের আলো
চেয়েছিলো দুঃখী মা-বাবার সুখের কাহিনী হতে ওরা
স্বামী-ভাই-বোন-আত্মীয়ের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলো
কী স্বপ্ন ছিলো ওদের মনে! বাঁচার এবং বাঁচানোর
যে স্বপ্ন দেখে মানচিত্রের কর্কট থেকে মকর ক্রান্তির প্রতিটি মানুষ
সেই স্বপ্নে ভিবোর হয়ে ভোরের সূর্যে গা ভিজিয়ে
সারি সারি কচি হাত-পাগুলো কী অস্থির উদ্দাম ছিলো
কিন্তু হায়! জীবনের গল্প বড়ই অল্পেতে শেষ হয়ে গেল!

অভিশপ্ত মৃত্যুক’পে হ্যামিলনের বংশীবাদক হয়ে ডেকেছিলো কারা?
ওরা জানতে পারেনি এভাবে মুহূর্তে ধূলিস্যাত হয়ে যাবে
ওরা বুঝতে পারেনি এভাবে ওদের ছোটপ্রাণ দেহের ওপর
বিশাল বিশাল ইট-সুরকির চাঁই ভেঙে পড়বে হুড়মুর
কী দুঃসহ! কী যন্ত্রণাকর মৃত্যুর শীতল হাতছানি
ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাথর চাপায় মৃত্যুর বীভৎস রূপ দেখা
ছটফট করেছে যতক্ষণ না প্রাণ বেরিয়ে গেছে দেহ হতে।

- Advertisement -

এ করুণ দৃশ্য কোনো সাহসী ক্যামেরাম্যান বন্দী করতে পারেনি
পারেনি ক্যামেরায় ধারণ করতে শাহীনার বাঁচার আর্তি
যে নিজ হাতে লোহার রড কেটেছিলো বাঁচার আশায়
আগুনের লেলিহান শিখা হঠাৎ প্রজ্বলিত হয়ে নিভে গেল
জীবনের সেই প্রদীপ শিখাটি। কী ব্যর্থতা! কী করুণ মৃত্যু!

কাল ক্বিয়ামত সেদিন নেমে এসছিলো সাভার অঞ্চলে বুঝি?
যারা কোনোক্রমে বেঁচে গেছে তাদের জিজ্ঞেস করুন,
কী অসহায় সমর্পণ মৃত্যুর হাতে, কী আহাজারী- কী মাতম!
কেউ শুনতে পেরেছিলো, বুঝতে পেরেছিলো এমন বিলাপধ্বনী?
সাভারের বাতাস এখন লাশের গন্ধে ভারী হয়ে আছে
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে ঐসব আত্মার ক্রন্দন ধ্বনি শোনা যায়!

আমার যারা বেঁচে আছি ঐ কংক্রিটের চাঁইয়ের
তলে গুঁড়িয়ে যায়নি দেহ
যারা এমন কুটিল দুর্বিপাক থেকে বেঁচে গেছি
দুর্যোগ-দুর্ভোগ-হত্যা-গুম-সন্ত্রাসের জনপদের মানুষ হিসেবে
আমাদের বিবেকের দরজায় কি খিল এঁটে দিয়েছি?
আমাদের লড়াকু মনগুলোর ঘরে তালা দিয়েছি?
কোথায় উদার উদ্বাহু- কোথায় ভ্রাতৃত্বের নিবিড় আলিঙ্গন?
কোথায় ভালোবাসার সুকোমল আশ্বাস ঘরে ঘরে?
যারা পদ-পদবী-ক্ষমতা-বিত্তের প্রাসাদে দোল খাচ্ছে
তাদের দেখেছি কুটিল হাসি
মৃত্যুও পারেনি এদের বিভেদের বেড়া ডিঙিয়ে মানুষের সারিতে দাঁড়াতে,
তবে দেখেছি একদল সাধারণ মানুষকে সেদিন
মানুষ ছাড়া তেমন পরিচয় নিয়ে হাজির হয়নি ওরা
দেখেছি একদল মানুষকে ছুটে আসতে পানি টর্চ হাতুড়ি
শাবল, অক্সিজেন-সিলিন্ডার, এয়ার-ফ্রেশনার নিয়ে এগিয়ে যেতে
এরপরও পোশাকী বাহিনীর সম্মিলিত উদ্ধার তৎপরতা পারেনি
মৃত্যুর মিছিলকে ছোট করতে।
এইভাবে রচিত হয়েছে এক মৃত্যু উপত্যকার অসমাপ্ত কাহিনী
গোটা বিশ্বের চোখের সামনে উদঘাটিত আমাদের প্রাণবধ গল্প
এইভাবে রচিত হয়েছে এক যন্ত্রণামন্থিত-বেদনাবিধুর ট্রাজেডি
যে কাহিনীর রূপকার কে জানা যায়নি- হয়তো যাবে না কোনো দিন
এভাবেই বুঝি এইসব জীবনের গল্প এতো অল্পে শেষ হয়ে যাবে?

আলোকিত প্রতিদিন/২৪ এপ্রিল-২০২১/জেডএন

- Advertisement -
- Advertisement -