আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।   ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কেমফিউশন : রসায়ন গবেষণায় এক নতুন সম্ভাবনা

-Advertisement-

আরো খবর

যুথি সাহা, বশেমুরবিপ্রবি : একটা সময় পৃথিবীতে তারাই রাজত্ব করেছে যাদের সম্পদ-ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিলো। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর দুনিয়া তার ঠিক বিপরীতমুখী। আধুনিক পৃথিবীতে তারাই সেরা যাদের রয়েছে মেধাশক্তি, মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা। আর এ গবেষণার বিষয়বস্তু বাংলায় সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করলে কেমন হতো। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মূলত ‘কেমফিউশন’ এর সৃষ্টি।
বিজ্ঞানের মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রসায়ন। পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের এবং পারিপার্শ্বিক সকল কিছুর ব্যাখার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রসায়ন জড়িত। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো বাংলাদেশ রসায়ন চর্চা এবং গবেষণায় এখনো যথাযথ প্রসার লাভে ব্যর্থ। এই গবেষণায় পিছিয়ে পড়া থেকে সামনে এগিয়ে আসতে ২৯ এপ্রিল-২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া একদল তরুণদের হাত ধরে জন্ম নেয় রাসায়নিক এক সংগঠন ‘কেমফিউশন’।
‘কেমফিউশন’ এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করা এবং একজন আদর্শ রাসায়নবিদ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা। এছাড়াও স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে রসায়নের প্রয়োগিক দিকসমূহ ও সৌন্দর্য তুলে ধরা।
এ সংগঠনটি অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বিজ্ঞান, রসায়ন, রাসায়নিক প্রকৌশল এর সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করছে। ক্ষুদ্র পথপরিক্রমার মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের প্রথম রাসায়নিক পূর্নাঙ্গ ওয়েবসাইট www.chemfusion.net । এই ওয়েবসাইটি রসায়নের বিভিন্ন বিষয়কে বাংলায় সহজ-সাবলীল, প্রানঞ্জল ও আর্কষনীয় করতে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে।
সম্প্রতি কেমফিউশনের আরেকটি অর্জন হলো সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রথম ‘হাইড্রোজেন’ নামক ই-ম্যাগাজিন। যা ইতোমধ্যে ৫৫০০ কপি ডাউনলোড হয়েছে। এটিকে সংশ্লিষ্টরা সকল পর্যায়ের রাসয়ন শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের একটি অন্যতম স্থান হিসেবে মনে করছেন।
এ বিষয়ে গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সুব্রত পাল জানান, ‘কেমফিউশন হচ্ছে রসায়ন ও রাসায়নিক বিজ্ঞান এ অধ্যয়নরত বাংলাদেশ এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষকদের একই ছাদের নিচে নিয়ে আসার উদ্যোগ। যেখানে কেমফিউশন এর নিয়মিত কর্মপরিধিতে আছে- রসায়নে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনামূলক এবং টিউটোরিয়াল ভিডিও, ব্লগ, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য দিকনির্দেশনামূলক কর্মশালা আয়োজন করা, গবেষণায় উৎসুক শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেয়া। এছাড়াও বিজ্ঞান তথা রসায়ন এর মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন এ যথাসম্ভব অবদান রাখা।’
সংগঠনটির সদস্য সচিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা রসায়নের মানুষগুলো ঠিক কতটা ঐক্যবদ্ধ? আমাদের বিশাল ক্ষেত্র থাকার পরও প্রতিবছর নতুন গ্র্যাজুয়েটরা ঠিক তথ্যের অভাবে, সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে হন্য হয়ে ঘুরে। সে প্রক্ষাপট থেকে কিছু করার তাগিদ আমাদের সবার হয়ত তাড়া করে বেড়ায়। এ রকম একটা প্রেক্ষাপট থেকে কেমফিউশনের শুরু। আমরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। আমরা ভালোবাসি স্বপ্নের পেছনের গল্প শুনাতে। আমরা বাড়তে চাই একসাথে, একি স্বপ্নের কাঠামোতে দাঁড়াতে। কেমফিউশন গল্প এক ভবিষ্যৎ উপন্যাস। একটা দুর্গম পথ পেরিয়ে, একটি তীরভাঙা গল্প পেরিয়ে আমরা সুদিনের আশায়, গল্পের খোঁজে আগামীর পথে ছুঁটছি।’
সংগঠনটির কো-অর্ডিনেটর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদ নেওয়াজ চৌধুরী নিশান জানান- ‘যে দেশ গবেষণায় যত বেশি উন্নত, সে দেশ তত বেশি উন্নত। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও যাতে জানতে পারে গবেষণার সহজ মাধ্যম এবং আমরাও যাতে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি সেই দিকনির্দেশনা দিতে পথ প্রদর্শক হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং একটি উন্নত দেশ গঠনে রসায়ন সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও রাসায়নিক বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে শিল্প বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। আশাকরি এই প্রতিষ্ঠানটি আগামীতে রসায়ন চর্চার জন্য আরো বিরাট সুযোগ করে দিবে।’
উল্লেখ্য ‘কেমফিউশন’হলো রসায়ন গবেষণা ও চর্চার এক নতুন সম্ভাবনার নাম। এ সংগঠনটি বৈজ্ঞানিক সংগঠনের আদলে গঠিত। তাদের আছে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশ, ইনোভেশন অ্যান্ড সায়েন্টিফিক প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ওয়েবসাইট এন্ড ব্লগসহ আরো চারটি টিম। এ সংগঠনটি মোট ৮টি টিম এবং ৪ হাজারের বেশি সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে রসায়নের উৎকর্ষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।রসায়ন গবেষণায় এক নতুন সম্ভাবনার নাম ‘কেমফিউশন’
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ সেপ্টেম্বর-২০২০/জেডএন
- Advertisement -
- Advertisement -