আবু সায়েম, কক্সবাজারঃ বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য তাদের ইতিবাচক কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের মনিকোঠায় স্থান পেয়েছেন ।তেমনই একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহাঃ শাহজাহান কবির। বিগত ১০ মাস আগে তিনি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যোগদান করেছিলেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় থাকাকালীন তিনি জনগণের সেবার দ্বার উন্মোচন করেছেন। রাত দিন এক করে কক্সবাজার সদর বাসীর জন্য কাজ করেছেন। কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুলিয়ায় জনগণের গণপিটুনিতে আহত হয়ে একজন ইয়াবা কারবারি থানা হেফাজতে নিহত হন। সেই ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্তের নির্দেশ দেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার। অথচ ঐ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসির কোনো দায়িত্ব অবহেলা পরিলক্ষণ করা যাচ্ছে না। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহা: শাহজাহান কবির বিগত ১০ মাসে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সদর মডেল থানাকে জনগণের সেবা কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। এমনকি জনশ্রুতি আছে তিনি সারা রাত তথা ভোর হওয়া পর্যন্ত সেবা প্রার্থীদের কথা চিন্তা করে কাজ করেছেন একাগ্রচিত্তে। থানা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি থাকাকালীন তিনি অফিসার ফোর্সে দারুণ সমন্বয় এনেছিলেন। যার কারণে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ছিলো চেইন অব কমান্ডের একটি চিত্র। রাত দিন কাজ করার কারণে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সেবা গ্রহীতাদের ভীড় পরিলক্ষণ করা যেতো প্রতিনিয়ত। জনগণকে প্রত্যক্ষ সেবা এবং দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তিনি বিট পুলিশিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে করেছেন গতিশীল। মাদক অস্ত্র উদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন।
ছিনতাই রোধে গ্রেপ্তারকৃত আাসামীদের প্রোফাইল তৈরী করে ডকুমেন্ট লিপিবদ্ধ করেছেন যাতে ভবিষ্যতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা না ঘটে। কক্সবাজারে মূল সমস্যা হচ্ছে, জমি দখল এবং হোটেল দখল। কিন্তু তিনি শক্ত হাতে তা দমন করে হোটেল দখল বাণিজ্য নির্মূল এবং প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করেছেন। করোনাকালে তিনি কক্সবাজার সদরবাসীকে চমৎকার সেবা প্রদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাকালীন তিনি বিবিধ সেবামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। থানা সূত্রে আরো জানা যায়, স্কুল কলেজে মাদক বিরোধী সমাবেশ করে তিনি স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে সচেতনতা সৃষ্টি সহ বিভিন্ন সৃজনশীল সভা সমাবেশ করে সচেতনতামূলক কাজ করেছেন। বীচ এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানে বিশেষ বিশেষ ফোর্সদের সমন্বয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকতো। বিভিন্ন জটিল মামলার রহস্য উদঘাটনে তিনি সক্ষম হয়েছেন। জনবান্ধন পুলিশিং কার্যক্রমকে করেছেন বেগবান। থানা রেকর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, বিগত ১০ মাসে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৩০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে । মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা ৪০২ টি। গ্রেফতার হয়েছে ৬০২ জন। কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশের অভিযানে তিনি ওসি থাকাকালীন ৬ হাজার ১১০ লিটার মদ এবং ৪৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করতে সক্ষম হন। গাঁজা ১৪ কেজি এবং বিদেশি মদ উদ্ধার হয়েছে ১৩৪ বোতল।
থানা রেকর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, বিগত ১০ মাসে ৫৩ টি এলজি, ২ টি পিস্তল, ১ টি পাইপগান, ৭৭ রাউন্ড কার্তুজ, ৭ টি পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র আইনে মামলা হয় ৫৫ টি এবং গ্রেফতার হয়েছেন ১২৬ জন।
ডাকাত এবং ছিনতাইকারী ১২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার ২৭২১ জন এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার ৮৭ জন। সামগ্রিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ১০ মাসে তিনি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় আমূল পরিবর্তন এনেছেন। সেবাগ্রহীতা এবং সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে উপচেপড়া ভীড় ছিলো সুষ্ঠু বিচার এবং সমাধানের আশায়। কক্সবাজার সদরের কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, ‘অদম্য পরিশ্রমী বিচক্ষণ গুণাবলির একজন অফিসার ইনচার্জ ছিলেন তিনি। যেকোনো কাজে এবং বিভিন্ন সমস্যায় গেলে তিনি তড়িৎ সমাধান দিতেন। একজন শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে সৈয়দ আবু মোহা: শাহজাহান কবির নিজেকে দাঁড় করাতে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন’। তারা থানা হেফাজতে আসামীর মৃত্যু পুনঃতদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। তাকে এভাবে প্রত্যাহার করে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করা হলে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভালো অফিসাররা হারিয়ে যাবেন। কেউ আর কোন দিন আগ্রহ এবং ভালোবাসা নিয়ে কাজ করবে না বলেও অনেকে মন্তব্য করেন। জনপ্রতিনিধি, কক্সবাজারের সচেতন মহল এবং সুশীল সমাজ কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহা: শাহজাহান কবিরের বিষয়টি পুনঃ তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান,বিগত চাকরি জীবনে অনেক অফিসারের আন্ডারে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু ওসি সৈয়দ আবু মোহাঃ শাহজাহান কবির অত্যন্ত অমায়িক এবং মানবিক কর্মকর্তা ছিলেন।অধস্তন কর্মীদের তিনি প্রতিনিয়ত মোটিভেটেড করে কাজ আদায়,করে নিতেন। আজ এমন পরিস্থিতি খুবই কষ্ট এবং দুঃখ অনুভব হচ্ছে। বিষয়টি তিনি সঠিক পুনঃতদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
আলোকিত প্রতিদিন/১৬ আগস্ট-২০২০/জেডএন