হরিরামপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলার প্রতিবাদ মানববন্ধন নিয়ে বিতর্ক

0
1010

প্রতিনিধি,মানিকগঞ্জঃ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেনসহ দুই ইউপি সদস্যের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। মানববন্ধন নিয়ে উপজেলার রাজনৈতিক মহলে দেখা দিয়েছে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া। করোনাকালীন ক্রান্তিকালকে উপেক্ষাকরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তোয়াক্কা না করে গত ১ জুলাই উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাহিরচর বাজারে অনুষ্ঠিত হয় এই মানববন্ধন। একাধিক ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ পায় ওই  মানববন্ধনের সংবাদটি। সেই সাথে ভাইরাল হয়ে যায় বর্তমান মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর সহজতম পন্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দ্বারায়। তারপর থেকেই মানববন্ধন নিয়ে সৃষ্টি হয় বিতর্কের। আর এই বিতর্কের কারণ হিসেবে দেখা যায়, তিনটি সংগঠনের নামে তিনটি ব্যানার ব্যবহৃত হয়েছে এই মানববন্ধনে। এক. হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নামে দলীয় ব্যানার। দুই, হরিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানার। তিন. রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ। কিন্তু এই মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারের পেছনে উপজেলা, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি নেই। দলীয় ব্যানার নিয়ে গুটি কয়েকজন লোক দেখা গেলেও তারা ছিল মূলত চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোক। উপজেলা, ইউনিয়ন কিংবা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের  কোনো সদস্য বা পদধারী কোনো নেতৃবৃন্দকে এই মানববন্ধনে দেখা যায় নাই। দ্বিতীয়ত হরিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানার নিয়ে যারা  দাঁড়িয়েছিলেন, সেখানেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে দেখা যায়নি। ফলে মানববন্ধনটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জানান, “এই মানববন্ধন  আমাদের দলীয় কোনো কার্যক্রম নয়। এটা কামাল চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত মানববন্ধন। এই মানববন্ধনে হরিরামপুর উপজেলা ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের কোনো প্রকার  ভূমিকা বা সম্পৃক্ততা নেই। যার ফলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতৃবৃন্দ ওই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেননা।” এর কারণ হিসেবে তারা জানান, “ওই ইউনিয়নের অনেক ভুক্তভোগীরা চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছে।  সুতরাং সে নির্দোষ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো কর্মকান্ডেরর সাথে আমরা তো নাই-ই, দলীয় ভাবেও আমরা তার অন্যায় কাজের দায়ভার নিব না। একই অভিযোগে অভিযুক্ত করেন হরিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধিক মুক্তিযোদ্ধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করে বলেন, “কামাল চেয়ারম্যান আমাদের সাথে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা করেননি। মানববন্ধনের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা। মানুষের মুখে শুনেছি মানববন্ধন করেছে।  সেটা আবার আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে। ওই মানববন্ধনে আমরা কোনো মুক্তিযোদ্ধারাই উপস্থিত ছিলাম না এবং আমাদের জানানোও হয়নি। উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। ওই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল প্রতিরোধ করতে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন তার লোকজন নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হামলা পাল্টা হামলা শুরু হয়। এতে করে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও দুই  মেম্বারসহ ছয়জন আহত হন। এছাড়াও গত ১০ মে বেশ কয়েকজন অসহায় ভুক্তভোগীরা চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন এবং ১৩ মে চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অসহায় ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসীরা প্রথম বিক্ষোভ মিছিল করে। মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নামে দলীয় ব্যানার এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে ব্যানার ব্যবহারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের  কোনো ব্যানার ব্যবহার করা হয়নি। কারণ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমাকে দলীয় নাম বা ব্যানার ব্যবহারের অনুমতি দেননি। তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তারপরেও আমার ওপর হামলার প্রতিবাদে দলীয় কোনো সহযোগিতা পেলাম না। আমার যদি কোনো অন্যায় বা ভুল  থাকে, তাহলে আমাকে ডেকে সতর্ক করে দিতে পারতেন। তাও কখনো করেননি। আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছে কারণ ওখানে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি ছিল। করোনাকালীন সময়ে এই মানববন্ধনের বিষয়ে হরিরামপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মুঈদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই মূহুর্তে মানববন্ধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। করোনাকালীন সময়ে কোনো জনসমাগম করার অনুমতি নেই।  মানববন্ধনের ব্যাপারে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন আমাদের প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেননি বরং আমরা গোপন সূত্রে জানতে  পেরে মানববন্ধন না করার জন্য বার বার তাকে নিষেধ করেছি। তারপরও তিনি তার লোকজন নিয়ে মানববন্ধন পালন করেন। মানববন্ধন পালনের সংবাদ পেয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেখানে পাঠিয়েছি। যাতে করে লোকসমাগম না করতে পারে। এর মধ্য দিয়েই তিনি ব্যক্তিগতভাবে  মানববন্ধনটি করেন।

 

আলোকিত প্রতিদিন/৬ জুলাই’২০/এসএএইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here