সংবাদদাতা, রাঙ্গাবালী(পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পরেছে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন জেলেরা। এদিকে মাছ শিকার বন্ধ, অন্যদিকে করোনার কারণে বিকল্প কাজও নেই। এ কারণে সাগর উপকূলের জেলেদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে। সংসারের ব্যয়ভার বহন ও মহাজনের নিকট থেকে আনা দাদনের টাকা শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেছেন জেলেরা। আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে। যার ফলে অনেকের ঘরের চুলায় এখন আগুন জ্বলছে না। এমন অবস্থায় উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে শত শত জেলে হাহাকার করছেন। মৎস বিভাগসূত্রে জানা যায়, দেশের মৎস সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর সমুদ্রে সকল প্রকার মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিনের অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বর্তমানে সমুদ্রে সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তবে মৎস বিভাগ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই করোনার কারণে উপকূলে ইলিশ শিকার প্রায় বন্ধ ছিল। করোনার প্রভাবে গত ২৬ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বরফ সংকট ও মাছ চালান দিতে না পারায় অনেক জেলেই মাছ ধরতে যায়নি। এরপরে আবার লকডাউন শিথিল হতে না হতেই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জাড়ি হয়। এতে প্রায় ৩ মাস ধরে ইলিশ শিকার বন্ধ রয়েছে উপকূলের জেলেদের। জেলেরা জানান, সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারণে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছেননা তারা। এদিকে করোনার কারণে গ্রামেও অন্য কোন কাজ নেই। বিগত বছরগুলোতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা সমুদ্র থেকে উঠে এসে এলাকায় দিনমুজুরি বা অন্যকোন কাজ করে সংসার চালাতো। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে কোন কাজ পাওয়া যাচ্ছেনা। এ কারণে ঘরে বসেই বেকার সময় পার করতে হচ্ছে জেলেদের। সংসারে ব্যয়ভারের একমাত্র মাধ্যম ছিল জেলে পেশা। এখন বিকল্প কোন আয়ের উৎস না থাকায় বিপাকে পরেছেন তারা। অন্যদিকে মাছের ব্যবসার জন্য মহাজনের নিকট থেকে আনা দাদনের টাকা কিভাবে শোধ করবে, তা নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে জেলেরা। জেলেরা আরও জানান, সরকার মৎস আহরণে বিরত থাকা জেলেদের জন্য যে প্রণোদনাদেন তা খুবই সামান্য। এ দিয়ে কোন মত দু’বেলা ভাত খাওয়া সম্ভব। কিন্তু সংসারের অন্যসব ব্যায়ভার বহন সম্ভব নয়। এর মধ্যে আবার যেসব জেলেদের নিবন্ধন তালিকায় নাম নেই। কিন্তু সমুদ্রগামী প্রকৃত জেলে, তারা সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। গঙ্গীপাড়ার জেলে জসিম কাজী বলেন, ‘আমরা ইলিশ শিকারী জেলে। বঙ্গোপ সাগরে ইলিশ শিকারই আমাদের পেশা। বছরে তিন-চার বার মাছ ধরায় নিষধাজ্ঞা থাকে। এর মধ্যে আবারও যোগ হয়েছে করোনা ও লকডাউন। এবছর সাগরে ভালোভাবে ১ মাসও মাছ ধরতে যাইতে পারি নাই। তাহলে আমাগো পুরা বছরের সংসার কিভাবে চালামু। সরকার যে সহায়তা দেয় তাও সামান্য।’ চরমোন্তাজ স্লইসঘাট এলাকার জেলে আব্দুল মৃধা জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় এখানে কোন বরফ কল নেই। ঢাকা ও জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে লঞ্চযোগে বরফ আনতে হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে যথা সময়ে বরফ না পাওয়ায় আমরা মাছ ধরতে পারি নাই। এছাড়াও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় মাছ চালান করতে না পেরে আমরা প্রায় দুই মাস যাবৎ ইলিশ ধরতে যাইনি। এরপর লকডাউন উঠানো হলে আবার কিছুদিন মাছ ধরতে সাগরে যাই। জালে ইলিশ ভালোই ধরা পরছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে আবার ৬৫ দিনের অবরোধ। যার কারণে সাগরে মাছ ধরতে পারছিনা। মাছের বোট করার জন্য মহাজনের কাছ থেকে যে টাকা এনেছি, এখন সেই টাকা পরিশোধের জন্য মহাজন বারবার চাপ দিচ্ছে। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ, আমরা টাকা পামু কই। একই এলাকার জেলে কামাল ব্যাপারী জানান, ‘উপকূলের অধিকাংশ মানুষ জেলে। এখানে মাছ ধরাই অনেকের একমাত্র পেশা। এর মধ্যে এই বছর ভালোভাবে ১ মাসও মাছ ধরতে পারেনাই। তাহলে কি দিয়া এখানকার জেলেরা সংসার চালাইবে। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে মানুষ এখন হাহাকার করছে। ব্যাক্তিগতভাবে আমি দেনা নিয়ে খুবি টেনশনে আছি। কি দিয়া দেনা দিমু, কি দিয়া সংসার চালামু আর কি দিয়া ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া করামু। রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস কর্মকতা মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, মৎস সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমুদ্রে সকল প্রকার মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদেরকে সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে নিবন্ধিত প্রতি জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়। এছাড়াও সমুদ্রগামী যেসব জেলে নিবন্ধিত তালিকায় নেই, তাদেরকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
আলোকিত প্রতিদিন/১৯জুন’২০/এসএএইচ