শিবগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ, অতঃপর কাজ শুরু

0
498

সংবাদদাতা,চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে ৩ দফা অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধের পর নির্মাণ ত্রুটি নিয়েই আবারো কাজ শুরু হবার অভিযোগ উঠেছে।তবে এ অনিয়মের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাব ঠিকাদার অস্বীকার করেছে। অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণকাজে বালির তুলনায় কম পরিমানে সিমেন্ট প্রদান, ওয়াটার লেবেল না করা, পুরাতন ইট-রড ব্যবহার করা, সঠিক মাপে বেইজ ও বিম ঢালায় না করাসহ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার। সোমবার (১৫ জুন) জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের নামোজগন্নাথপুর-ফিল্টের হাটে কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজে এসব অনিয়মের অভিযোগ করেছে গ্রামবাসীরা । আর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সরেজমিন পরিদর্শনেও। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার , উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ৩ বার কাজ বন্ধ হলেও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে নির্মাণত্রুটি নিয়েই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এর নির্মাণ কাজ। এর জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদাসীনতাকে দায়ী করছে স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট গ্রামের মোঃ জাফর ইকবাল জানান, সিলেকশন বালু না দেয়াসহ পিলারের বেইজ ঢালায় ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও তা সাড়ে ৩ ফিট/৪ ফিট করার অভিযোগে গত ১৭ রমজান এলাকাবাসী কাজে প্রথম বাঁধা দেয়। তিনি আরও জানান, পুরাতন রডের বালা দিয়ে পিলার ঢালায় এবং ওয়াটার লেবেল ছাড়াই ১০ ইঞ্চির ঢালায় ৬ ইঞ্চি করে দেয়া হয়েছে। অনুসরণ করা হচ্ছেনা পাস হওয়া ভবনের ড্রয়িং। সেসময় স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাংসদ ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ করার কথা বললেও কয়েকদিন কাজ বন্ধ থাকার পর লিখিত কোন পদক্ষেপ না থাকায় আবারো কাজ শুরু হয়। এভাবে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২ দফা কাজ বন্ধ হলেও পরে আবার শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাকিব রাজু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি অভিযোগ পাওয়াত পরও এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করতে আসেননি। গ্রামের স্থানীয় নেতা মোঃ শফিকুল মন্ডলের অভিযোগ, কাজ বন্ধ করার পর গ্রামবাসীর পক্ষে ৫ সদস্যের একটি কমিটিকে কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কমিটিকে অগ্রাহ্য করে কমিটির এক সদস্য ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলীর ইন্ধনেই এলাকাবাসীর বাঁধার মুখেও কাজ চলছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আ.লীগ নেতা হাসান আলী জানান, আমি এই কাজের ভালো মন্দ বুঝি না। তাই কাজ কেমন হচ্ছে এব্যাপারে আমি কিছুই জানি না এবং আমার কোন দায়িত্ব নেই। তবে আমিও চাই, কাজটি ভালোভাবে হোক।
অন্যদিকে কাজের শুরু থেকেই পুরাতন রড, ইট, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ মুখলেসুর রহমান। তবে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজের ঠিকাদার নবাব আলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান , তার কাজটি তিনি সাব ঠিকাদারের কাছে হস্তান্তর করেছেন।তাই এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নাই।আর সাব-ঠিকাদার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সব নিয়ম-কানুন মেনে সঠিকভাবে কাজ চলছে। কোন অনিয়ম হচ্ছে না এবং কোন পুরাতন সামগ্রী এ নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছেনা। এবিষয়ে দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাকিব রাজু মুঠোফোনে জানান, আমি নিজে উপস্থিত হতে পারিনি। কিন্তু ফোনে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, কাজ ভালোই হচ্ছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষথেকে আলাদাভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হলে বিষয়টি তিনি জানাতে পারবেন।। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাংসদ ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, এবিষয়ে আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা, ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক না কেন, স্বাস্থ্যখাতে সরকারি কাজে কোন অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না।

 

আলোকিত প্রতিদিন/১৫ জুন ‘২০/এসএএইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here