বর্ষা মৌসুমে জরুরি মুহূর্তে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে দৌলতদিয়ায় লঞ্চ ও ৬টি ফেরিঘাটের বিপরীতে বিকল্প আরেকটি ঘাট তৈরির কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ। গত বছরের বর্ষার ভয়াবহ নদী ভাঙনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় দৌলতদিয়ায়। ওই সময় দৌলতদিয়া প্রান্তের ৬টি ফেরি ঘাটের ২টি ঘাট সম্পূর্ণ নদী গর্ভে চলে যায় এবং লঞ্চ ঘাটসহ বাকি ফেরি ঘাটগুলোতেও পড়ে ভাঙনের প্রভাব। ফলে ব্যাহত হয় যাত্রী ও যানবাহন পারাপার। এ সময় নদীর তীব্র স্রোত ও ভাঙনে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল এবং সীমিত আকারে চলে ফেরি।
এদিকে গত বছরের ভয়াবহ ভাঙনের বিষয় চিন্তা করে এবার আগেই নড়েচড়ে বসেছে ঘাট রক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। ফলে এ বছরের শুষ্ক মৌসুমের মার্চ থেকে দৌলতদিয়া ১নং ফেরিঘাটের আপ থেকে ৬নং ফেরিঘাটের ডাউন পর্যন্ত ফেরিঘাট রক্ষার্থে ভাঙনরোধে বালুর বস্তা ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ।যা এখনও চলমান। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলতেও প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।
অপরদিকে, গত বছরের তীব্র ভাঙনে লঞ্চ ঘাটসহ সবগুলো ফেরিঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। এ কারণে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৬নং ফেরিঘাটের ডাউনে বিকল্প একটি ঘাট তৈরির কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ। ঘাটটি তৈরির জন্য ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া বাইপাস সড়ক থেকে প্রায় দেড় হাজার ফিটের একটি সংযোগ সড়ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সড়কটিতে ড্রেজারের বালু দিয়ে ভরাট করা হবে। পরবর্তীতে ব্রিক সোলিংয়ের মাধ্যম সম্পন্ন করা হবে বিকল্প নতুন ঘাটের কাজ।
এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। তবে নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙনের তীব্রতায় লঞ্চ ঘাটসহ কোনো ফেরিঘাটে সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পন্টুন সেট করে নতুন ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ এর আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ঘাট রক্ষার্থে তারা মার্চ মাস থেকে প্যাকেজ অনুযায়ী জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো আছে। জরুরিভিত্তিতে কোথাও ফেলার প্রয়োজন হলে সেই প্রস্তুতিও তাদের আছে।এছাড়া গত বছরের ভাঙনের কথা চিন্তা করে নতুন বিকল্প ঘাট নির্মাণের কাজ করছেন। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। লঞ্চ ঘাট ফেরিঘাটের কোনো একটিতে সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সেই পন্টুন এখানে সেট করে চলাচলের উপযোগী করবেন।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ঘাট এলাকার ভাঙন রক্ষার্থে বিআইডব্লিউটিএ কাজ করছে এবং ঘাট এলাকার স্থাপনা ও ঘর-বাড়ি ভাঙনরোধে তিনজন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ নদীর তীব্র স্রোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয় দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকায়। ওই সময় ফেরিঘাটের সাথে ওই এলাকার প্রায় সহস্রাধিক বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে। ভাঙন রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইউডব্লিউটিএ কাজ করলেও দৌলতদিয়া ১ ও ২নং ফেরিঘাট বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য ঘাটেও পড়ে ভাঙনের প্রভাব। বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। এতে করে চরম ভোগান্তি পড়ে দক্ষিণ পশ্চিমঞ্চলের ২১ জেলা থেকে অাসা ঢাকামুখি যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। দীর্ঘ প্রায় এক মাস চলতে থাকে পদ্মার এ ভাঙন তাণ্ডব।