সরকারি কাজে বাধা : ডিমলায় চার পুলিশ আহত, আটক-২

0
669

নীলফামারী সংবাদদাতা : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও প্রাদূর্ভাব রোধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে হোটেল খোলা রাখাকে কেন্দ্র করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় থানা পুলিশের এক এসআই ও তিন কনস্টেবলসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় রাতে ওই বাজার থেকে আলম (৪৫) নামের এক ওয়ার্কশপ (লেদ) ব্যবসায়ী ও শুক্রবার (৫জুন) সকালে উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই এলাকা থেকে জড়িত মূলব্যক্তি হোটেল মালিককে আটক করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় বর্তমানে ওই এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক, তবে নিরাপরাধ কোনো মানুষের নামে মামলা ও তারা যেন কোনো রকম হয়রানীর শিকার না হোন। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪জুন) বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার মনিটরিংয়ের ধারাবাহিকতায় উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের টুনিরহাট বাজারে থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়শ্রী রানী রায়। এ সময়ে ওই বাজারের মিম হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টটি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিকেল ৪টার পরও খোলা দেখতে পেয়ে তিনি (ইউএনও) তা বন্ধ করতে বলে সেখান থেকে চলে যান। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা পরও সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অভিযোগে পুনরায় ফিরে সেই হোটেলটি খোলা দেখে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অপরাধে একই ইউনিয়নের দোহলপাড়া গ্রামের মৃত, মিনুর ছেলে ও হোটেলটির মালিক মিলন আহম্মেদ (৩৮) ওরফে বিটিশের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় অন্যথায় তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানার কথা বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানটির মালিক দোকানে থাকা মোগলাই ও পুরি কাটার একটি ছোরা হাতে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারকের উপর চড়াও হয়ে বাধা প্রদান করেন। এ সময়ে উপস্থিত পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীর তাকে শান্ত হতে বললে হোটেল মালিক বিটিশ ছোরা নিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে ধাওয়া করেন। পরে এসআই বাকিনুর ইসলাম ওই পুলিশ কনস্টেবলকে বাঁচাতে গেলে দোকানের বারান্দার একটি বাঁশের খুঁটি ভেঙ্গে তার কান ছুয়ে ঘাড়ে পড়লে তার কান ফেটে রক্ত ক্ষরণ হয় ও তিনি ঘারে প্রচন্ড আঘাত পায়। একই সময়ে হোটেলের মালিক বিটিশ ও তার ছোট ভাই আলম (২২) সহ অপর দুই পুলিশ কনস্টেবল আউয়াল ও সফিকুল ইসলামের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরও লাঞ্চিত করে আহত করে। আহত এসআই বাকিনুর ইসলামের কানে চারটি সেলাই ও তিন পুলিশ কনস্টেবলসহ চার পুলিশ সদস্য ডিমলা উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ঘটনায় রাতেই পুলিশ ওই বাজারে অভিযান চালিয়ে এক ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী ও শুক্রবার (৫জুন) সকালে উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন থেকে উক্ত হোটেল মালিককে আটক করতে সক্ষম হন। তবে অভিযুক্তদের পরিবার ও বেশকিছু এলাকাবাসীর দাবি ঘটনার সময় হোটেল মালিককে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলা রাখার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক মৌখিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন, এ ঘটনায় থানা পুলিশের এক এসআই ও তিন কনস্টেবল আহত হয়েছে। রাতে ঘটনায় জড়িত একজন ও শুক্রবার সকালে ঘটনার মূল অপরাধীসহ দুই জনকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়শ্রী রানী রায় বলেন, ‘ওই হোটেল মালিককে বিকেলে হোটেল বন্ধ করার কথা বলা হলেও তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি নির্দেশ অমান্য করে হোটেল খোলা রাখার খবরে পুনরায় সেখানে গিয়ে তার দোকান এখনও খোলা কেনো তা জানতে চেয়ে তাকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করতে চাইলে তিনি পুলিশসহ আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছোরা হাতে নিয়ে সরকারি বাধা প্রদানসহ পুলিশকে ধাওয়া করেন। এ সময়ে ওই পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে গিয়ে দোকানের বারান্দার একটি বাঁশ খুলে পড়ে থানা পুলিশের এক এসআইয়ের কান ফেটে রক্ত ক্ষরণ হয়ে আহত হন। আমি ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা প্রদানের কারণে থানায় একটি জিডি (সাধারন ডায়েরী) করেছি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার প্রসেস করার আগেই ওই হোটেল মালিক আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠায় তা করা সম্ভব হয়ন’।

 

আলোকিত প্রতিদিন/৪ জুন’২০/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here