মানিকগঞ্জ, প্রতিনিধি : ঈদের ছুটি কাটিয়ে মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। চাপ বাড়ছে আরিচা-পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি এবং ভাঙনে পাটুরিয়া ঘাটের পন্টুনের প্রবেশদ্বার পানিতে তলিয়ে গেলেও সচল রয়েছে একটি ফেরি ঘাট। পারাপারে নিরাপদ দূরত্বের বালাই নেই যাত্রীদের। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বারবার সতর্ক করা হলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। প্রশাসন কিংবা বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
করোনার ঝুঁকি নিয়েই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে এবং সড়ক পথে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোবাইকসহ ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে বসে কর্মস্থলে ছুটছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা করোনার ঝুঁকি নিয়ে দুরুত্ব বজায় না রেখে গাদাগাদি করে বসে ফেরিতে নদী পার হচ্ছেন। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।এদিকে
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে। ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় অনেকেই হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে আবার অনেকেই রিকশা, ভ্যান, অটোবাইক, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলে ভেঙে ভেঙে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফলে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়াও।
শনিবার (৩০ মে) সকাল থেকেই পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ঢাকামুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দুটি ফেরি ঘাট বন্ধ হওয়ায় ব্যক্তিগত এবং মালবাহী গাড়ী ফেরিতে উঠতে দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষার সময় তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা দীর্ঘ হচ্ছে। এছাড়া পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরী ঘাঠে পৌছাতে সময় লাগছে দ্বিগুণ।
শুক্রবার ভোর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছান। গাদাগাদি করে করোনা ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দেন অনেকে। প্রশাসন থেকে বার বার সতর্ক করা হলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
ঘাটে আটকে থাকা ট্রাক ড্রাইভার মোহন মিয়া বলেন, ভোর ৭টায় ঘাটে এসেছি। সবগুলো ঘাট ভাল থাকলে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সিরিয়াল ধরতে পারতেন।
শনিবার সরেজমিনে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিতে ঢাকাগামী যাত্রীদের ভীড়। গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ মাইক্রো, প্রাইভেটকার, ব্যাটারিচালিত আটোবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেল যোগে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট থেকে ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাতে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য পাটুরিয়া ঘাটে আসা যাত্রী আব্দুল মালেক বলেন, সংসার চালানোর তাগিদে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি নিয়েই পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছি।
ফরিদপুর থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসা পোশাক শ্রমিক মোতালেব মিয়া বলেন, ফরিদপুর থেকে সিএনজিতে দৌলতদিয়া পর্যন্ত আসতে ৫শ’টাকা খরচ হয়। আবার এখন পাটুরিয়া থেকে নবীনগর যেতে মাইক্রোবাসে ৫শ’ টাকা করে ভাড়া চাচ্ছে। এমনিতেই বাড়ি গিয়ে টাকা পয়সা শেষ। এরপর এখন কর্মস্থলে ফিরতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ যেন মড়ার ওপর খড়ার ঘা।
পোশাক শ্রমিক হাফেজা বেগম বলেন, পাবনা থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত সিএনজিতে আসতে ৫শ’ টাকা ভাড়া নেয়। আবার কাজিরহাট থেকে ইঞ্জিন চালিত স্যালো নৌকায় নদী পার হতে ২শ’ টাকা নৌকা ভাড়া দিতে হয়। পাবনা থেকে আরিচা আসতে তার ৭শ’ টাকা খরচ হয়েছে। এখন কর্মস্থল সাভারে যেতে প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে ৫শ’ টাকা। সবমিলে কর্মস্থলে ফিরতে ১২শ’ টাকা খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসির) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে পাটুরিয়াতে ৪ ও ৫ নং ঘাট দুটি লো-ওয়াটার লেবেল থেকে হাই ওয়াটার লেবেলে পন্টুনের র্যাম তোলার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে আমাদের ৪টি ফেরি ঘাট প্রস্তুত হয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি ফেরি চলছে। তবে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ঘাটে তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, ফেরিতে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে পারছি না। মানুষ গাদাগাদি করে উঠে পড়ছে। বিগত সময় পুলিশ কঠোর অবস্থানে ছিলো এখন তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
আলোকিত প্রতিদিন/৩০ মে ‘২০/ এসএএইচ