রুশ কবি ওসিপ মান্দেলেশ্তামের কবিতা

0
1451

লেনিনগ্রাদ
[ভাবানুবাদ : মনজুরুল হক]
.
ফিরে এসেছি নিজের শহরে, যে-শহর অশ্রম্নর মতো পরিচিত আমার,
পরিচিত ধমনির মতো, শৈশবের ফুলে যাওয়া গ্রন্থির মতো।ফিরে এসেছ এখানে তুমি – গিলে নাও দ্রম্নত
লেনিনগ্রাদের নদীতীরের সড়কবাতির মাছের তেল।চিনে নাও অল্পদিনে ডিসেম্বরের দিন,
ডিমের কুসুমে যেখানে মিশে থাকে পিচের ঘ্রাণ।শোনো পিতারবুর্গ, আমি এখনো চাই না মরে যেতে :
তোমার কাছে জমা আছে আমার সব টেলিফোন নম্বর।পিতারবুর্গ, আমার আছে এখনো ঠিকানা,
যেখানে আমি নিশ্চিত পেয়ে যাব মৃতদের কণ্ঠস্বর।অন্ধকার সিঁড়িতে আমার বসবাস, আর কপালে আমার
আঘাত করে ছিঁড়ে নিয়েছে মাংস।সারারাত আমি অপেক্ষায় থেকেছি আগের মতোই প্রিয় অতিথির আগমনের,
মোমের আলোয় সেঁটে নিয়ে দুয়ারের আংটা।আমরা বেঁচে আছি, পায়ের তলায় দেশের কোনো অস্তিত্ব অনুভব না করে,
আমাদের মুখের কথা দশ কদম আগেও যায় না শোনা,
তবে সেইখানে চলে যায় এমনকি অর্ধেক কথাবার্তাও,
যেখানে এর অর্থ করে নেয় ক্রেমলিনের পর্বতবাসী।
তাঁর পুরু আঙুল, যেন নাদুস কোনো কীট,
আর কথা তাঁর ওজনের পাথর, ভারী,
তেলাপোকার গোঁফ তাঁর ঝুলে থাকে বাইরের দিকে,
জুতোর মাথা তাঁর চকচকে উজ্জ্বল।চারিদিকে তাঁর ভিড় করে আছে ভীত সব কাঙাল যোদ্ধা,
সে খেলে এইসব অর্ধেক মানুষকে নিয়ে।
কেউ দেয় শিস, কেউ কাঁদে, কেউবা করে বিড়ালের ধ্বনি,
তবে একাই সে করে গর্জন, তুলে ধরে আঙুল,
ঘোড়ার খুরের মতো জারি করে সে নির্দেশ একের পর এক :
কাউকে কুঁচকিতে করে আঘাত, কারো বা কপালে কিংবা পিঠে।
যেন শাস্তি নয়, বরং আনন্দ অফুরান
বিশাল এক বুক আমাদের এই ওসেতিনের।অলঙ্কারের সোনালি আভায় জ্বলছে
বনে বড়দিনের সজ্জিত গাছ;
ঝোপে আছে খেলনার নেকড়ে
তাকিয়ে ভয়ংকর চোখে।হে, যাবতীয় এইসব দুঃখ আমার,
হে, আমার নীরব মুক্তি
অনুভূতিহীন নিষ্প্রাণ
যেন সদাহাস্যরত স্ফটিক!আমাকে দেয়া হয়েছে এই শরীর – কী যে করি আমি এটাকে নিয়ে,
এতটা অনন্য আর সবটাই আমার?এই সুখে নীরবে নিশ্বাস নিই আর বেঁচে থাকি
বলো, কাকে জানাতে হবে কৃতজ্ঞতা?আমি মালি, আর আমিই যে ফুল,
অন্ধকার পৃথিবীতে নই আমি একা।অনন্তের কাচে রেখে যাই আমি
নিশ্বাস আর দেহের উষ্ণতা।এর ওপর আঁকা হয়ে যায় নকশা
অজানা এই সময়ের।আসুক মুহূর্তের মেঘাচ্ছন্ন পতন –
সুন্দর এই নকশা যাবে না মুছে।অনিদ্রা। হোমার। খোলা পাল।
পড়ি আমি জাহাজের তালিকা মাঝামাঝি পর্যন্ত :
এই দীর্ঘ বিষণ্ণতা, এই সারসের রেলগাড়ি
কোনো একসময় যা হেলাস থেকে উঠে গেছে আকাশের দিকে।অজানা দেশের দিকে উড়ে যাওয়া সারসের গোঁজের মতো –
সম্রাটের মাথায় ঐশ্বরিক ফেনা –
কোথায় ভেসে যাও তুমি? হেলেনের খোঁজে,
ট্রয় কি তোমার একার, এচিয়ান পুরুষ?এই সমুদ্র আর হোমার – সবকিছু আন্দোলিত ভালোবাসায়।
কার কথা শুনব আমি? এবার যে নীরব থেকে যায় হোমার,
কালো সাগর, কাছে আসে, করে কোলাহল
আর রূঢ় চিৎকারে ঢুকে যায় মাথায় আমার।সহায় হও তুমি, প্রভু আমার, এই রাত করে দিতে পারো।
ভীত আমি জীবনের ভয়ে, গোলাম তোমার,
পিটারের শহরে বসবাস যেন হচ্ছে শুয়ে থাকা
সঙ্গে নিয়ে কবরের অন্ধকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here