ঈদের ছুটিতে সরকারি চাকুরেদের কর্মস্থল ত্যাগে মানা, বন্ধ থাকবে আন্তঃজেলা পরিবহন

0
665

::নিজস্ব প্রতিবেদক::
নতুন করে ৭ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করে সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে আদেশ জারি করেছে সেখানে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এবার রোজার ঈদের সময় আন্তঃজেলা যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়েছে, “ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। ওই সময়ে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।”
এই আদেশ বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, “সরকারি আদেশে শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে কর্মস্থলে অবস্থানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এছাড়া চলমান ‘সাধারণ ছুটির’ সময় এক জেলা থেকে আরেক জেলা এবং এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় জন সাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বেসরকারি চাকুরেদের ছুটি থাকলেও এবার ঈদের সময় বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হবে না।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৫ মে বাংলাদেশে রোজার ঈদ হতে পারে, যা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। সরকারের ছুটির আদেশে আরও বেশ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জরুরি সেবা যেমন- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা সাধারণ ছুটির বাইরে থাকবেন।
সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল চলাচল অব্যাহত থাকবে।
কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টি মিডিয়া) নিয়োজিত কর্মীরা এ ছুটির আওতায় পড়বেন না।
ঔষধশিল্প, উপৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা’ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও পরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।
ছুটির সময় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।
রমজান, ঈদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসগুলো প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেইসঙ্গে তারা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
পাশাপাশি সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলে বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে। এরপর সেই ‘ছুটির’ মেয়াদ কয়েক দফায় ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হল। তবে এতদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা দুই ঘণ্টা শিথিল করা হয়েছে।
নতুন আদেশে বলা হয়েছে, “জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না।” দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ১৭ মার্চ থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here