ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ
হতশ্রী বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতি এখন অতীতকালের অংশ। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলার ১৭ দিনের ব্যবধানে আরেক বিশ্বকাপ খেলতে নামছে বাংলাদেশ, যে বিশ্বকাপের আবহ বা জার্সির রঙ দুটোই ভিন্ন। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে আগামীকাল মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল দশটায়। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নেই চোটের কারণে, পারিবারিক কারণে নেই সাকিবের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করা লিটন কুমার দাসও। চোটের কারণে তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেনদেরও পাচ্ছেন না এই সিরিজের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো টেস্ট অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী পরতে যাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুটা হয়তো এর চেয়ে কঠিন হতে পারতো না বাংলাদেশের জন্য। তবুও, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষে সিরিজেই, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের ঐ মহাকাব্যিক জয় কি বাংলাদেশ দলকে অনুপ্রাণিত করছে না?
কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে তা মনে করেন না একেবারেই। প্রায় দুই বছর আগের ঐ ম্যাচের সাথে এই ম্যাচের প্রেক্ষাপট-কন্ডিশন-খেলোয়াড়, প্রায় সবই পুরোপুরি ভিন্ন। ঐ সুখস্মৃতির বদলে তাই হাথুরুর মাথায় ঘুরছে সিলেটের মাঠ আর কন্ডিশন। ২০১৮ সালের পর এই মাঠে আর টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ, সফরকারী নিউ জিল্যান্ডের মতো তাই স্বাগতিকদের জন্যও মাঠটা ‘অচেনা’ই।
তবুও কিছু কিছু ব্যাপার তো অনুমান করাই যায়। শরীফুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদের সাথে টেস্ট আঙিনায় নবাগত হাসান মাহমুদ, মাত্র তিনজন পেসার রয়েছেন বাংলাদেশের স্কোয়াডে। অপরদিকে নিয়মিত স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলামের সাথে দলে ফিরেছেন সর্বশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৩৬ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হওয়া ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসান, ডাক পেয়েছেন চার ম্যাচে ২৪ উইকেট নেওয়া, অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদও। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণটা তাই স্পিনকেন্দ্রিক হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আর বাংলাদেশের মূল সমস্যা যে ব্যাটিংয়ে, সেখানে প্রধানত দায়িত্বটা নিতে হবে অধিনায়ক শান্ত, আর সিনিয়র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর-মুমিনুলদেরই। একই সাথে, টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তনটা স্মরণীয় করার সুযোগ থাকছে সাদমান-নুরুল-জয়দের সামনে, অভিষেক হতে পারে শাহাদাত হোসাইন দীপুরও। তবে তামিম-সাকিব-লিটনের অনুপস্থিতিতে নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের সামলানোর কাজটা যে সহজ হবে না, সেটা অনুমেয়।
অধিনায়ক টিম সাউদির সাথে কাইল জেমিসন আর নিল ওয়াগনার, কিউইদের পেস আক্রমণটা যথেষ্ট ভীতিজাগানিয়া। এর সাথে যখন যুক্ত হচ্ছেন পাঁচ স্পিনার, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, এজাজ প্যাটেলের সাথে দুই অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র আর গ্লেন ফিলিপস, বৈচিত্র্যময় এই আক্রমণকে সামলানোটা অন্তত খাতাকলমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু কঠিনই। ব্ল্যাকক্যাপসদের ব্যাটসম্যানদের তালিকাটাও নিতান্ত ছোট নয়, কনওয়ে-ল্যাথাম-মিচেল-নিকোলসের সাথে কেন উইলিয়ামসন। অনুপ্রেরণার জন্য বাংলাদেশকে তাই হাঁটতে হচ্ছে অতীতের পথেই, দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ তিন টেস্টেই অপরাজিত বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ঘরের মাঠে সিরিজ ড্র করা, মুমিনুলের দারুণ ব্যাটিং, সোহাগ গাজীর সেঞ্চুরি-হ্যাটট্রিকের বিশ্বরেকর্ড, আর সাম্প্রতিক সময়ে ঐ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের অবিস্মরণীয় জয়। বর্তমানটা পক্ষে না থাকলে, অতীতের অনুপ্রেরণাতেই তো ভরসা রাখতে হয়!
আলোকিত প্রতিদিন/২৭- নভেম্বর-২০২৩/এসএএইচ