::তুষার আহসান::
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকা ‘রেড জোন’ চিহ্নিত হয়েছে বলে। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০ এলাকা ছাড়াও দেশের আরও তিনটি জেলার বিভিন্ন এলাকা রয়েছে রেড জোনে। যার মধ্যে গাজীপুরের সব উপজেলা রেড জোনের আওতায় পড়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটি এই তালিকাপ্রস্তুত করেছে। জনসংখ্যার অনুপাতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেশি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি হয়েছে। চিহ্নিত এলাকায় কবে থেকে লডডাউন শুরু হবে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলেননি কেউ। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘লকডাউনের জন্য এলাকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটা চূড়ান্ত করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর লকডাউন কার্যক্রম শুরু হবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি’ এসব এলাকায় লকডাউন দেওয়া হবে।
কবে থেকে লক ডাউন হচ্ছে রেড জোনে এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার জানান, তারা প্রস্তুতি শেষ করেছেন, এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছেন। লক্ডাউন বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করছে তা কবে থেকে হবে। তিনি বলেন, ‘কাল থেকে লকডাউনে যেতে পারবে, এমন আমি শুনি নাই। আমরা এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছি। বাস্তবায়ন করবে সেসব সংস্থা, তাদের প্রস্তুতি থাকলে তা কাল থেকেই হতে পারে। দুদিন পরেও হতে পারে। তবে ঢাকায় প্রস্তুতি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে শনিবারের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার মিলে এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে লাল এলাকা চিহ্নিত করবেন।
ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গত ১৪ দিনে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে, সেসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে এই অনুপাত লাখে ১০। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি ‘রেড জোন’র মধ্যে দক্ষিণে ২৮টি এবং উত্তরে ১৭টি এলাকা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার রয়েছে ১১টি এলাকা।
এসব এলাকায় সোমবার থেকেই লকডাউন হবে কি না- জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন জানান, তালিকা তারা পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। এটা এখনও খসড়া তালিকা, চুড়ান্ত কোনো নয়। এটা নিয়ে আমরা স্টাডি করছি। এলাকাগুলোকে আরও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আর এসব এলাকায় কাল থেকে লডডাউন হবে কি না এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই।’
রোববার (১৪ জুন) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সারাদেশে যে অবস্থায় ছিল, ঠিক একই অবস্থা চলমান থাকবে।’ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এখন আমরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভিত্তিতে জোনিং করেছি। অধিক সংক্রমিত এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে এসব স্থানে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
ঢাকা দক্ষিণের যেসব এলাকা
যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।
ঢাকা উত্তরের যেসব এলাকা
বসুন্ধরা, গুলশান, বাড্ডা, ঢাকা সেনানিবাস, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।
চট্টগ্রামের যেসব এলাকা
চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালীর ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
এছাড়া
আরও তিনটি জেলার কয়েকটি উপজেলা ‘রেড জোন’র আওতায় পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর এবং পুরো সিটি করপোরেশন এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গাজীপুরের সব উপজেলা রেড জোনের আওতায় পড়েছে। নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী ও পলাশ এলাকা পড়েছে রেড জোনের মধ্যে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৫ মার্চের পর থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়। পরে সংক্রামণ ঠেকাতে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তার ভিত্তিতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার পরীক্ষামূলকভাবে অবরুদ্ধ রয়েছে।
লকডাউনে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা
‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকা ১৪-২১ দিনের জন্য লকডাউন করা হবে। লকডাউন পরিপালন হচ্ছে কি না তার জন্য পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক মনিটরিং কমিটি করা হবে। রেড জোনে থাকা কেউ যাতে ওই এলাকার বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরের লোকজন যাতে সেখানে ঢুকতে না পারে তার জন্য সংশ্লিষ্ট পয়েন্টগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেবে। একেবারে বড় ধরনের প্রয়োজন ছাড়া ওই এলাকা থেকে কেউ বের হতে বা ঢুকতে পারবে না। শুধু ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকবে। কাঁচাবাজার, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, শপিং মলসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করবে। আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা এবং আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে। জনসমাগম এড়াতে কাঁচাবাজার বন্ধ রেখে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান ও মাথায় ডুলি নিয়ে চলা ফেরিওয়ালাদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় পণ্য বিক্রি করতে দেওয়া হবে।