সংবাদদাতা,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মিটার রিডিং না দেখে অনুমান নির্ভর বিদ্যুৎ বিল করার অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (পবিস) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি – ২’র গত ৩ মাসের বিদ্যুতের প্রদানকৃত বিলের সাথে মিটার রিডিংয়ের কোন মিল নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে ২/৩ গুন বেশি বিল করা হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাস বিস্তাররোধে দেওয়া লকডাউনে মার্চ,এপ্রিল মাসে মিটার রিডিং না দেখেই বিদ্যুৎ বিল করার কথা স্বীকার করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি – ২ রাঙ্গুনিয়া অফিস কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ দশকে এ অঞ্চলে পিডিপির বিদ্যুৎ সেবা শুরু হয়। যা পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় নেয়া হয়। বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সেবার কার্যক্রম চালাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (পবিস)। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে মিটার রিডিং না দেখে একত্রে তিন মাসের ভৌতিক বিল গ্রাহকদের মাঝে প্রদান করলে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর আগেও মিটার রিডিং থেকে কয়েকগুণ বেশি মনগড়া বিদ্যুৎ বিল সরবরাহ করার অভিযোগে উপজেলা বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে গ্রাহকেরা। তাতে বিদ্যুৎ বিলের অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক গ্রাহকের কাছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এদিকে উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর, লালানগর, হোচনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, পারুয়া, মরিয়ম নগর, চন্দ্রঘোনা, শিলক, কোদলা, পদুয়া, বেতাগী, পোমরা, সরফভাটা ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যুতের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে মিটার রিডিং না দেখে মনগড়াভাবে রিডিং বসিয়ে বিল তৈরি করে তা আমাদের দিয়েছেন। এতে বিল অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।’
উপজেলার ধামাইরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘পুর্বের চেয়ে আমার ঘরের বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ দেখানো হয়েছে এবং বিলের কাগজের সাথে মিটার রিডিং এর কোন মিল নেই।’ লালানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রবাসী আবদুল জলিলের স্ত্রী কামরুন্নাহার বলেন, আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে শহরে থাকি। করোনার কারণে আমার বাড়ি প্রায় ৩ মাস বন্ধ ছিল কিন্তু অনেক টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
রুবেল মার্কেটের মালিক রুবেল বলেন, ‘অনুমান ভিত্তিক বিলের কারণে আমার বাসা-বাড়ি ও মার্কেটের বিল অন্য মাসের তুলনায় দ্বিগুণ ধরা হয়েছে, যা অনিয়মের শামিল।’
আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুন) পৌরসভার নুরজাহান ক্লাবে অবস্থিত বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রে গ্রাহকদের ভিড় দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন গ্রাহক বলেন, মিটারে রিডিংয়ের থেকে অনেক বেশি রিডিং দেখানো হয়েছে। তাই তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। অভিযোগ করতে আসা গ্রাহক মোশারফ আলী বলেন, ‘জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের বিলসহ প্রতি মাসে বিল আসে ২০০-২৫০ টাকা। সেখানে মে মাসের বিল দেওয়া হয়েছে ৮০০ টাকার ওপরে।’ তাঁদের মতো আরও অনেকে একই ধরনের অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ রাঙ্গুনিয়া অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ডিজিএম মোখলেছুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘করোনা ঝুঁকির কারণে মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসের বিল করা হয়েছে মিটার না দেখে। কারণ বিদ্যুৎকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখতে পারেননি, তাই হঠাৎ করে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
‘আগের ২-৩ মাসের বিল দেখে আনুমানিক বিল পাঠানো হয়েছে। এ কারণে কোনো কোনো গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল হয়েছে। আবার কোনো কোনো গ্রাহকের বিল কম দেয়া হয়েছে। তবে মে মাসের বিল মিটার রিডিং দেখেই করা হয়েছে। তারপরও যদি কারো বিলে অতিরিক্ত ইউনিট লেখা হয় তা অফিসে নিয়ে আসলে সংশোধন করে দেয়া হবে।’ এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে গ্রাহকদের অনুরোধ করেছেন তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/৪ জুন ‘২০/এসএএইচ