আমাদের শহর নগর গ্রামে গঞ্জে বিয়েতে সানাইয়ের সুর বাজত । ‘হলুদ বাঁটো মেন্দী বাঁটো বাঁটো মেন্দীর ফুল’ গানের সুরে আর হাসি-আনন্দে ভরে উঠত এক এক অঞ্চল । অন্য শহর নগরে চলন আসত ,গল্প স্বল্পে মেতে উঠত এলাকা। গ্রামেগঞ্জে চৈত্র সংক্রান্তি মেলা বসতো, বসন্তকে বরণ করা হত লোকজ সঙ্গীত যেমন – ‘তাক ধুম তাক ধুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল , সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল’ এর মাধ্যমে । রমজান শেষে খুশির ঈদে বুকে বুক মিলিয়ে কুশলাদি বিনিময় চলতো। এসব ছিল আমাদের স্বাতন্ত্র্য ঐতিহ্য । হঠাৎ বৈশ্বিক মহামারীরূপে ঘাতক নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমণে আমাদের জনপদে আপনজন বিয়োগে আমাদের কৃষ্টি কালচার, লোকজ সংস্কৃতি আবছায়ায় বন্দি হয়ে গেলো , ছন্দের পতন হলো !
এখন অনেকটাই বিনিদ্র রজনী পার করছি । প্রতি পদে পদে মৃত্যু তাড়া করছে ঘাতক ব্যাধি কোভিড-১৯ । ঘাতক করোনাভাইরাস হাসি আনন্দকে ম্রিয়মাণ করেছে । জাগতিক নিয়ম কানুন,সুস্থ পথ ও পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে চোরাবালুর পথেই হাঁটছে ।
এই বৈশ্বিক মহামারীতে ইউরোপ ,আমেরিকা সহ গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে । বিশ্বের মহা শক্তিধর ও তারুণ্যের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা , এই নাকালে পরিস্হিতিতে প্রায় দুই কোটি লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে । অন্য দেশের কথা না হয় বাদই দিলাম।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(IFM) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিষ্টালিনা জর্জিয়াভা পর্দা সরিয়ে ২৭ এ মার্চ বলে দিলেন ,” অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে ।মন্দার মধ্যেই জীবন কাটবে । আর একটু কষ্ট করে সংসার সামলাবেন । কিভাবে গাড়ীর যন্ত্র নিবেন এ সব না হয় যেনে রাখুন ”
করোনা ভাইরাসের ছোবল , হিংস্র হায়নার চেয়েও ভয়ংকর । ধনবান বিত্তবান , রাজা, মহারাজা, শিশু, আবাল- বৃদ্ধ -বনিতা এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরে , ভূমদ্ধ্যসাগরের যুদ্ধ জাহাজে , ঘাতকের বিষাক্ত ছোবলে বিনা নোটিশে ওপারে পাঠাতে কোনো প্রকার সময় দিচ্ছে না ।
কেন এই মহামারী , কেন এই দুর্যোগ ? এই কাটা বিছানো বা মৃত্যুপুরীর পথ , হয়ত এর কিছুটা উত্তর মিলবে , বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ টমাস ম্যলথাস (Thomas Malthus) এর ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে রচিত An easy on the principles of population বইটিতে । সেখানে তিনি মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য যে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন ,আজ তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি জনসংখ্যা সম্পর্কে বলেছিলেন । তার মতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে ,জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রন মান বাড়ে জ্যামিতিক হারে – ২,৪,৬,৮,১৬ আর খাদ্য উৎপাদন বাড়ে গাণিতিক হারে – ২,৩,৪,৫,৬ । দুটি তথ্য উপাত্তের মধ্যে ব্যাপক ফারাক , সংঘাত অনিবার্য । খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় দিগুণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি । ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদের মতে , জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের স্বাভাবিক উপাদান হল যুদ্ধ বিগ্রহ মারামারি।
আমরা বিভিন্ন পর্যাচলনায় দেখতে পারি , প্রানী ও উদ্ভিদ জগত , তার সংগ্রামের মাধ্যমে তার সত্ত্বা বা অস্তিত্ব নির্ধারনের (মতপথের) নির্দেশন আছে। এতে প্রতিকুল পরিবেশ প্রজাতি ধ্বংস হয় ঠিকই ,আবার নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় । আমরা এই(তার) বইতে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব তথ্য পাই
আমরা মাঝে মাঝে ভূলে যাই প্রকৃতির কথা, প্রকৃতি র সংঙ্গে আমরা অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত বন্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মাতৃক্রোড়ে এটা ভুলে গেলে চলবে না, স্ব স্ব অবস্থানে থাকতে হবে , আমাদের আরো মানবিক হতে হবে কিন্তু বাস্তবে আমরা কি করি?
আজ ইট বালুর কংক্রিটের শহরের ওপর আমাদের জীবন।এখানে অনুপস্থিত মানুষের ভালোবাসা আত্মার আত্মস্থ।ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই নিজের প্রয়োজন অপ্রয়োজনে বাবুগিরি দেখানোর জন্য আমরা প্রানী ও উদ্ভিদের চলমান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ওপর জবরদস্তি করি।
তথাকথিত সভ্যতার নামে উজাড় করছি তাদের অস্তিত্ব ও পরম্পরা ভাবে তাদের ঐতিঝ্য।আমাদের সমাজে প্রানী ও উদ্ভিদ আমাদেরই যে অংশীদার তারাও যে আমাদের সমাজের পথ ও পাথেয় তাকেই আমরা অস্বীকার করছি।
ব্রাজিলের কোটি কোটি একর সবুজ বনাঞ্চল আমাজন, যা আমাদের পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে।সামান্য মুনাফার লোভে সেই সবুজ অরণ্য ধ্বংস করে কারখানা গড়তেও আমার দ্বিধা করছি না। প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।
আমরা মানুষ প্রকৃতিরই সন্তান।আসমানের দিকে তাকালে আমরা অনেক কিছু দেখতে পাই।সুর্য আমাদের আলো দেয়।নিশিরাতে গ্রহ, নক্ষত্র জ্বলজ্বল করতে থাকে।আমরা পৃথিবী নামক গ্রহে বাস করি।জীববৈচি্ত্র্যময় প্রকৃতিকে আমরা গলাটিপে মারতেও দ্বিধা করছি না।সবকিছু উপেক্ষা করে আমরা মানবিকতার সীমানা উপেক্ষা করেছি।
বাবুই পাখির বাসা ও তার সুনিপুণ কারুকার্য। কাঠবিড়ালির এগাছ থেকে ওগাছে ওঠা,তালগাছের একপায়ের দাড়িয়ে থাকা, চিরপরিচিত শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক, আমাদের স্বেচ্ছাচারিতা জন্য সবযেন আজকাল উধাও হয়ে গেছে।মানুষ তার বিলাসবহুল ফ্যাশান জন্য অরন্য উজার করে, জলাভূমি ভরাট করে যত্রতত্র শপিং কম্পলেক্স, কারখানা প্রাসাদ ও অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট গড়ে তুলছে।
তারই ফলশ্রুতিতে প্রানীরা ফলমূল শিকড় বাকড়,খাবার পাচ্ছে না।তারা জীবন বাঁচানোর জন্য লোকালয়ে চলে আসলে খাবারের জন্য মানুষরূপী পাষানেরা তাদের মেরে ফেলছে। পাশাপাশি সাপ,ব্যাঙ কাঁকড়া সমূলে নীরমূল করতে দ্বিধা করছে না।
তারই ফলশ্রুতিতে তপোবন,উপবনে বাঘ, সিংহ, হরিনের দেখা মেলা দায়।দ্রাবিড় ও আর্য সভ্যতাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে মেতে উঠেছি ৮ হাজার বছর আগে আদিম সমাজে অবুঝ যাযাবর মানুষেরা যে কাজ করতো,সেই কাজ করছি এই বিংশ শতাব্দীতে। বানর হনুমান সমুদ্র সীমানায় হালদায় , ডলফিন কে মেরে পৈশাচিক উল্লাস প্রকাশ করছি।
আজ আমরা সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাস রাজা মহারাজা, ধনী দরিদ্র ২১০ টি দেশে এ মহামারী জেঁকে বসেছে।বিজ্ঞান কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে এ ঘাতক ব্যাধির জয় জয়াকার সারাবিশ্বে। ম্যালথাসের প্রকৃতি বানী ফিরে আসতে দেরী হয়নি।প্রকৃতি যেন প্রতিশোধ নিচ্ছে।একজন মানুষকে অপর মানুষের থেকে ৩ মিটার দুরে থাকতে হচ্ছে, ঘরের বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না।প্রবল ক্ষমতাধর আমেরিকা, ইউরোপের মানবিক বিপর্যয় ঘটে গেছে।সারি সারি কফিনে আপনজন আপনজনের লাশ কে শেষ দেখাও দেখতে পারছে না।
স্বস্ব ধর্মের স্ব স্ব রীতিতে কাফন ছাড়া দাফন করতেও পারছে না।যে বাবা সন্তান লালন পালন করলো তার জানাযায় বা অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়ায় অংশ গ্রহন করতে পারছে না।কারন ঘাতক ভাইরাস দ্রুততম সময়ে মানব সমাজে ছড়িয়ে পরছে।
করোনা ১৭ মে ২০২০ পর্যন্ত ১৮৮ টি দেশে মোট আক্রান্ত ৪৬,৮৩,৬৪৬ জন মোট মৃত্যু ৩,১০, ৮২৫ জন।যার ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক অবস্থা নাকাল হয়ে গেছে,কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে।
আমরা ভূপেন হাজারিকার সেই মর্মোস্পশীয় গান ভূলে গেছি ” মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য ” সাম্রাজবাদী দানব রাষ্ট্র সমূহ পরাশক্তির পাল্লা ভারি বা আমি হনুরে জাহির করার জন্য যুদ্ধো যুদ্ধ খেলা করে সবচেয়ে দীর্ঘ শতবছর ব্যাপী ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ মেয়াদ কাল ছিল ১৩৩৭– ১৪৫৩ সাল মানুষের লাশের উপর রক্তের হলি খেলা। যায় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ সময় কাল ছিল ২৮ শে জুলাই ১৯১৪–১১ নভেম্বরের ১৯১৮,, আবার দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ –২ সেপ্টেম্বরে ১৯৪৫ যা ছিল এডলফ হিটলারের পৈশাচিক উল্লাস,ফ্যাকল্যান্ড যুদ্ধ ১৯৮২ সালে , আবার চলছে উপনিবেশক রাষ্ট্র সমূহের খনিজ সম্পদ , তেল , গ্যাস হীরক হরিলুট ও (প্রভাব বলায়ের) পুনর্বন্টন বানিজ্যিক নীতি পোক্ত করার জন্য । আগ্রাসী কালো পাহাড়ের কালো পাহাড়ের দ্বন্দ ও তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ডঙ্কা।
চলমান বিশ্বের দিকে ফিরে চায় মানব হয়ে মানবের ওপরেই কি নির্মম অত্যাচার করেছে। মানবিক মূল্যবোধকে কবর দিয়েছে।সমষ্টি স্বার্থ মানবতা বা জাতীয়তাবাদকে ত্যাগ করে লাগামহীন ভাবে মুনাফার ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা লাগিয়েছে।
ব্যাক্তি পকেট ভারী করেছি।সবাই যেন বিলগেটস হতে চাই।সবার চ্যাটার্ড বিমান থাকতে হবে।আজকে আমাদের চলমান আকাঁ বাঁকা পথে মহীয়সী রুপি মানুষের কথা ভুলে যায় , সৎ ন্যায় নিষ্ঠাবান মানুষ তথা কাল মার্ক্স নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত ও শরৎচন্দ্রের কোন মূল্যায়ন হয় না।এ রক্ত পিপাসু ধনবাদীরা ডলারের পাহাড় গড়ে তুলে।
সেই ডলার বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে তাদের জীবনকে বাঁচাতে পারে না।তারই ফলশ্রুতিতে তারা জানালা দিয়ে ডলার ছুড়ে ফেলছে।মুনাফা খোর ধনীরা মানবের রক্তের নিশানার ওপর নৃত্য করেছে। প্রকৃতির কথায় না হয় বিশ্লেষণ বাদই দিলাম মানব হয়ে মধ্য প্রাচ্য সহ সারাবিশ্বে মানুষের ওপর যে অত্যাচার করেছি সেই ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছ।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে শেষ হতেই বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্র সমূহ নিজেদের মধ্যে পরাশক্তির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, মানবতা কে বৃদ্ধাআঙ্গুলা দেখিয়ে পরমাণু বোমার চেয়ে আরো উন্নত ফর্মের কেমিক্যাল ওয়েপন । ব্যাকটরিয়া ওয়েপন এই দানবীয় অস্ত্র মধ্যেপ্রাচ্য সহ অন্য জনবসতির উপর ফেলতে এদের বুক কাপে না , রক্তের স্রোতের উপরে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে,
আমাদের চোখের সামনেই সেই নারকীয় হত্যাকান্ড ভেসে ওঠে হিরোশিমা নাগাসাকির উপরে এটম বোম মারে প্রায় লক্ষাধিক লোক মারা যায়, আরো বহু লোক পঙ্গু ল্যাঙড়া হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, আর মধ্যপ্রাচ্যে তেল, গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পরাশক্তির।
তারা ভুমধ্যসাগরীয় তলা দেশ দিয়ে পাইপ লাইন এ-র ম্যাধমে ৬ বিলিয়ন ডলারে গ্যাস নিয়ে যায়, বড়ই পরিতাপের বিষয় তার নাম দেয় ( pipeline of peace ) ” শান্তির পাইপ লাইন ” আগ্রাসীদের চলমান প্রক্রিয়ার আন্তঃসাম্ররাজবাদীর দ্বন্দ্ব সংকটকে ঘনীভূত করে নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম অস্ত্রবিক্রি করে , মুনাফা অর্জন করে । আর অন্য দিকে মধ্যেপ্রাচ্যে লাশের কফিনের মিছিল দীর্ঘ হয়।
যুদ্ধ বিগ্রহে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায় । সিরিয়ায় যুদ্ধে আসাদ সরকারের পক্ষ নেয় ইরান, চীন,রাশিয়া আর বিপক্ষে যুক্তরাজ্য , যুক্তরাষ্ট্র , ইউরোপ ইউনিয়ন । লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায় । অন্যরা পঙ্গু , অন্ধত্ব ও গৃহহীন হয়ে মানবতার জীবন যাপন করে । এ সম্পর্কে লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন বলে ,সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধে ২৯ হাজার শিশু মারা যায়২০১৭ -২০ মে নভেম্বর পর্যন্ত ।
সিরিয়ান নেটওয়ার্ক যার হিউম্যান রাইটস সিরিয়ায় ও ” সিরিয়ান অবজার্ভেটরি যার হিউম্যান রাইটস তথ্য ২০১৭ – ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লক্ষ মারা যায় , আর কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় ।
সাম্রাজ্যবাদের চলমান এই আগ্রাসী যুদ্ধে শেষ প্রান্তে এসে প্রায় ৯ লক্ষ লোক মারা যায় । কোটি কোটি লোক বাস্তুচ্যুত ও মানবেতর জীবন যাপন করে । কাজের অভাবে পেটের দায়ে অনেক রমনী নিজের সম্ভ্রম বিক্রি করে ।
অনেকে আবার ক্ষুধার যন্ত্রনায় ও বোমারুপ বিমান ও যুদ্ধের ঝঞ্জার হাত হতে রক্ষার জন্য উত্তাল ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে । পথে পথে ভূমধ্য সাগরের খরাস্রোত ও জলদস্যুদের অত্যাচারে সাগরে সলিল সমাধি হয় । এর হিসেব কে রাখে । বর্বর আঘাতে কত মাসুম শিশুর মা বাপ ডাকা বন্ধ হয়ে যায় । কাফন ছাড়া দাফন হয় । সুবিধাবঞ্চিত ও সাধারণ মানুষর রক্তের স্রোতে লালে লাল হয়ে যায়। আবার আমরা ভিয়েতনামে দেখি প্রভুরা আন্তর্জাতিক চরিতার্থ স্বার্থে প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বোমা বর্ষন করে তারা রক্তের উপর উল্লাস প্রকাশ করে । এই বর্বর ঘাতকরা মানুষ হত্যার পাশাপাশি গাছপালা,পাখপাখালি, পাহাড়পর্বত , নদী ,সমুদ্র , জীবজন্তুর উপর অসুভ প্রভাব খাটায় বা তাদের অবস্থানকে সুসংগঠিত করে । অবাধে মৎস শিকার, তিমি মাছ নিধন , বোমা , ক্ষেপণাস্ত্র , বিষাক্ত গ্যাস এ মানুষ যেমন নিঃশ্বাস নিতে পারে না ঠিক তেমনই মারাত্মক মরণ অস্ত্র বিস্ফোরণে তেজস্ক্রিয় কোন কিছুর স্বাভাবিক গতি থাকছে না ।
মুক্ত ভাবে চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আবার জলবায়ু ও পরিবর্তন হচ্ছে । ফলে স্বাভাবিক ঋতুর পরিবর্তন হচ্ছে। শীতের সময় শীত নাই , বর্ষার সময় বৃষ্টি নাই । বিশাল অ্যান্টার্টিকা মহাদেশ , হিমালয় , আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড থেকে বরফ গলে যাচ্ছে ।
মানব যেন প্রকৃতির উপর রূঢ় আচরন করছে । তাই প্রকৃতি কি বসে থেকেছে ? না প্রকৃতি বসে থাকেনি , এই রক্তের হলি খেলা দানবের বিরুদ্ধে , ম্যালথাস এর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হয় , প্রকৃতিও যেন তার অবস্থানকে সুসংহত করার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন ভাইরাস যেমন ইবোলা,সোয়াইন ফ্লু, ঘাতক করোনা ভাইরাস দিয়ে সে যেন সারাসি অভিজান শুরু করেছে তারই প্রাক্ষাপটে মানুষ আজ অন্ধ কূলে বন্দি । আর অপর দিকে কুমির ,বাদুর, সাপ, ব্যাঙ ,মুরগী ,কচ্ছপ ,ইদুর , বাঘ , সিংহ , পাহাড়, পর্বত, মাছ অবাধে চলাচল করছে ।
আর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ ঘাতক কোভিড -১৯ ভাইরাসের কাছে নিস্বার্থ ভাবে আত্মসমার্পন করেছে । আজ সমুদ্রে ডলফিন খেলা করে, তিমি মাছ সাঁতার কাটে , কুমির ঘুরে বেড়ায় , সবুজ চত্বরে কাঠবিড়ালী খেলা করে আর আমাদের পাশে ঘুঘু কোকিল শ্যামা ডাকে । আর পৃথিবীময় চার দেওয়ালের জেলখানায় মানবজাতি ভীত সন্ত্রস্ত জীবন যাপন করে
প্রচণ্ড প্রতাপশীল দানব করোনা ভাইরাস পৃথিবীর সমস্ত মানবকে ডুবন্ত জাহাজে উঠিয়ে নিয়ে ভেসে ভেসে চলেছে । সে জাহাজ ভাইরাস ক্রুর হাসি হেসে খেয়াল খুশিমত অজানা দিকে চলছে । কে বাহাদুর, কে প্রতাপশীল, কে সুবিধাবঞ্চিত তার কাছে কোনো বিচার নাই। নির্লজ্জ বেহায়াপনা ভাইরাস বিনা নোটিশে উপরে পাঠাচ্ছে ।
এখন আর আনবিক বোমা,নাপাম বোমা , পারমানবিক বোমা ,পেট্রিক ক্ষেপণাস্ত্র রাডার চলিত বিমান , কেমিক্যাল বিষযুক্ত বোমা যার কোনোটাই এখন কাজে লাগে না । যার পিছনে বড় বড় পরাক্রমশীল আমেরিকা , চীন ,ফ্রান্স বাজেটের সিংহাংস ব্যয় করে , তারা কি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পেরেছে ?
আজ মানবকুলের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে । মানুষ নির্বাক হয়ে ডুবন্ত নৌকার ভিতর তীর্থ কাকের মত বসে আছে । যার যার ধর্মের দোয়া দরুদ পড়ছে একটু বাঁচার আশায় , আর মৃত্যুর পর দাফন কাফনের যেন যথাযথ মর্যাদায় হয় ।
বড়ই পরিতাপের বিষয় যে খাত মানবকুলে ফুলে ফলে ঘেরা পৃথিবীর রুপ রসের সুগন্ধ ছড়াবে সে খাতকে আমরা বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখাচ্ছি । স্বাস্থ্যখাত ,কৃষি ও জীববৈচিত্র্য এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
হায়না পারমানবিক বোমা প্রতিযোগিতায় , লাশের মিছিল ভারী করে , কিন্তু ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে না । মানুষের খাদ্য যোগান, কক্সবাজারে তিমি মাছ ও বসন্ত কোকিলের কুহু কুহু ডাক শোনা যায় না । সেই অর্থনীতিবীদ ম্যালথাসের বানী সত্য হয়ে গেলো । প্রকৃতি যেন প্রতিশোধ নিল। করোনা ভাইরাস থেকে মানব কূল শিক্ষা পেল বোমা বারুদ দ্বারা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না ।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে দরকার ঔষুধ ভ্যাকসিন টিকা সামাজিক দূরাতো আর সুষম খাবার । তায় সকল বোমা বারুদ কে সাগরের অতল গর্ভে ফেলে বোমা মুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে । স্বাস্থ্য , কৃষি ও জলবায়ু জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত । এ সব খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে । কার্বণডাই অক্সাইডের অন্ধকার নিখিল না বানিয়ে জীবন্ত অক্সিজেনের সবুজ নিখিল গড়তে হবে । যতক্ষন না পর্যন্ত টিকা ভ্যাকসিন আবিস্কার না হবে ততক্ষন স্বাস্থ বিধি মেনে চলতে হবে ,এর কোন বিকল্প নায়।
আমরা আশাবাদী মানুষ আশায় বাঁধি ঘর ,মানুষ মানুষের জন্য করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে সমস্ত দুশ্চিন্তা অশান্তি দূর ভাবনা উড়ে যাক ফুড়ে যাক।
ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত পৃথিবী গড়ে উঠুক । সবার ঘরে ঘরে ফুলে ফলে ফাগুনে আগুনে ভরে উঠুক , বিশ্বের প্রতিটি পরিবার, জয় হোক মানবতার ।