আজ বৃহস্পতিবার, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ষড়যন্ত্রকারী মুক্ত হোক ছাত্রলীগ

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

::তুষার আহসান::
কতটা ভয়ঙ্কর হলে প্রধানমন্ত্রীর নথি জালিয়াতির দুঃসাহস দেখাতে পারে, সিদ্ধান্তকে উল্টে দিতে পারে! না, এটা কোন সাধারণ ঘটনা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগে বিশেষ পদে অবস্থান করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বদলে ফেলার দুঃসাহস কোন ভাবেই ছোট কোন ঘটনা মনে করা যেতে পারে না। ছাত্রলীগ থেকে সদ্য স্থায়ী বহিষ্কার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিনের এই স্পর্ধার উদয় কোথা থেকে তা খুব সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের; অবশ্যই খতিয়ে দেখা জরুরী। এই দুঃসাহসের ইন্ধনদাতা থাকার সমূহ সম্ভাবনার গন্ধ লেপ্টে আছে। ভাবতেই হচ্ছে- কতোটা ভয়ঙ্কর এই মুমিন।
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ইতিহাসে প্রথম কোন শীর্ষ দুই নেতার চাঁদাবাজির অভিযোগে পদ হারানোর ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির নীতিনির্ধারকদের এক বৈঠকে ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয়। স্থলাভিষিক্ত হন সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক পদে লেখক ভট্টাচার্য। ঘটনার ঠিক ৮ মাসের মাথায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিন করলো আরও বড় অপরাধ। যে অপরাধ খোদ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জের সামিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বলেই সুধিজনরা মনে করছেন। শোভন-রাব্বানীর চাঁদাবাজীর ঘটনার থেকেও মারাত্মক বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে এই ঘটনা ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগকে ভাবমূর্তির ফের সংকটে ফেলেছে। যদিও এই ঘটনায় মুমিনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে দলটি। গ্রেফতার হয়েছে মুমিন। কিন্তু এটাই শেষ নয়, প্রয়োজন কঠিনতম সাজা। যে সাজা পরবর্তীতে এমন কাজ থেকে বিরত রাখবে সবাইকে। এমন সাজা হতে হবে, যেন এই কঠিন অপরাধ নয়, ছোটখাট অপরাধ করতেও বুক কেঁপে ওঠে। কোন প্রলোভনেই যেন অপরাধে জড়াতে সাহস না করে কেউ।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ থেকে মুমিনকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। ছাত্রলীগে কোনো অপরাধীর স্থান নেই। তাই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে সংগঠনের ভেতরে উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে।’ কিন্তু ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটিতে যারা উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব নিয়ে আছেন, তাদেরকে সদা সতর্ক থাকা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। এধরণের অপরাধের ইচ্ছে পোষণের আগেই যেন তথ্য এসে হাজির হয় তাদের কাছে- এমন একটি গোয়েন্দা ইউনিট তৈরি করা প্রয়োজন তাদের মধ্যে। না হলে অপরাধীর অপরাধ সংগঠিত হয়ে যাবার পর প্রমাণ মিললে পরে বা অভিযোগের পরে বহিষ্কার কোন সুফল বয়ে আনবে না, বরং বারবার কালিমায় ঢেকে যাবে। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিতদের এই অধপতন সে দিকেই আঙুল তুলছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে তরিকুল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমা ও ফরহাদ নামে তিনজনকে আসামি করে দায়ের করা মামলার বরাতে আমরা জানতে পেরেছি- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নথি পাঠানো হয়েছিল। এই নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে এলে তিনি এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি বলে ফোনে তরিকুলকে জানিয়ে দেন। এরপরেই তরিকুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ফরহাদ নামে একজনের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। মামলায় বলা হয়, ‘এরপর সেই নথিতে তরিকুল ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং’ করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেন। একইভাবে অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। প্রায় এক মাস আগে নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়।’
এই নথি হস্তান্তরের আগে ফাতেমা ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করেন এবং হস্তান্তরের পরে আরেক দফায় ১০ হাজার টাকা তার ছেলের বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নেন বলে মামলায় বলা হয়।
শোভন-রাব্বানী কিংবা বর্তমানের মুমিনের মত আর কাউকে আমরা ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দেখতে চাই না। এরা সবাই দেশের শত্রু। এরা ষড়যন্ত্রকারী। এরা দেশের জন্য, জাতির জন্য বড় অকল্যাণ ঘটাতে পারে। আমরা চাই- ষড়যন্ত্রকারী মুক্ত হোক ছাত্রলীগ।

- Advertisement -
- Advertisement -