::তুষার আহসান::
একদিনেই ১৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯৯ জন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার চিত্রে আরও ৭০৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫ জন। এদিন সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার সংখ্যাটিও ছিলো রেকর্ড
পরিমান, ১৩০ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হলেন ১ হাজার ৯১০ জন। বিষয়টি আশা জাগানিয়া।
এরই মধ্যে সব অফিস-আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলতে চলেছে অচিরেই। বিমানের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে খুব শিগগির। ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে বিমানপথে সব ধরণের যোগাযোগের কথাও জানানো হয়েছে, বন্ধ রাখা হয়েছে অন্যান্য দেশে যাত্রী পরিবহন। তারপরও বিশেষ কারণে দুটি দেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের। এতোকিছুর পর সীমিত আকারে দোকানপাট খোলাকে কেন্দ্র করে চলছে আলোচনা সমালোচনা। যখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে, তখন কেন সীমিত করে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে শুরু করলো? কেনই বা ব্যবসায়ীরা ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছেন- এমনটাই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন জনগণের মনে।
এদিকে সবই যখন খুলে দেওয়া হয়েছে তখন আর ধর্মীয় উপসনালয় বন্ধ রেখে লাভ কী, বলে প্রশ্ন তুললেন অনেকে। যদিও যারা এই প্রশ্ন তুলেছেন তারা আসলে জানেন কি না বোঝা গেল না যে, সরকার কখনোই ধর্মী উপসানলয়কে বন্ধ করেনি। বরং মসজিদে নিয়মিত নামাজ হয়েছে, মন্দির, গীর্জায় প্রার্থনা চলেছে। তবে সেখানে কড়া শর্ত ছিলো। আজ থেকে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে মুসল্লিদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সেই সব শর্তের একটি ‘নামাজের পরে মসজিদ জীবানুমুক্ত করা’ তা কি আসলে সম্ভব হবে? একদিকে শ্রম অন্য দিকে বিশাল অঙ্কের খরচ। এই যুক্তিতে অনেককেই আলোচনার ঝড় তুলতে দেখা গেছে। যখন অঘোষিত হলেও কড়া লকডাউন চলেছে, তখনই আমরা দেখেছি- জনগণ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের কথার তোয়াক্কা করছে না। শাস্তি দিয়ে, ধমকিয়ে ঘরে ফেরাতে হয়েছে। এখন এই শীথিলতা কি ধরে রাখতে পারবে তাদের?
আসলে এতো সব প্রশ্নের কোন প্রয়োজনই পড়ে না, যদি আমরা সচেতন হই। দোকান খুলে দিলে এতো সমালোচনা কেন? আপনি সচেতন হয়ে দোকানে না গেলেই হলো! ঈদ শপিং ইচ্ছে হলে করবেন না- মিটে গেল। খামোখা এতো কথা বলে সময় অপচয়, মানুষে মানুষে মতবিভেদ বাড়িয়ে কী লাভ?
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে মার্কেট-মসজিদ খোলার সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি দিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জীবন ও জীবিকা দুটোই রক্ষা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ কথা সত্য। জীবন ছাড়া জীবিকা, আর জীবিকা ছাড়া জীবন- কোনটাই চলে না। দুটোর সমন্বয় দরকার। এখন একজন ব্যক্তিকে তার পকেট বুঝে জীবন, কিংবা জীবন বুঝে পকেট ব্যবস্থা করে নিলেই হয়ে গেল। তাকেই ঠিক করতে হবে কোনটা জরুরী। যেটা জরুরী, সেটা মেনে নিলেই হয়ে গেল। সরকার কখনোই কাউকে সব খুলতে ফোর্স করেনি।
তবে হ্যাঁ, এটাও সত্য- যদি সব খুলে যায় তাহলে যাদেরকে জনসেবায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যেতে হচ্ছে, বিশেষ করে পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার, সাংবাদিক- তারা নিরাপদ থাকতে পার বেন তো?
সবাই নিরাপদে সুস্থ থাকবেন- শুভ প্রত্যাশা সব সময়।