চিংড়ি বাজারেও অচলাবস্থার ধাক্কা

0
1367

:: আলোকিত প্রতিবেদন ::
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের চিংড়ি বাজারে অচলাবস্থার ধাক্কা চরমে পৌঁছেছে। রফতানি বাতিল হয়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও নেমেছে এর দাম। ফলে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী চলমান লকডাউন এই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করবে বলে বলছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত চিংড়ির অধিকাংশই চাষ হয় দক্ষিণের জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়। এর বাইরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় লোনাপানি ধরে রেখে স্বল্প পরিমাণে বাগদা ও গলদা চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে চিংড়ি উৎপাদনে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে বাংলাদেশ। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রায় এক লাখ ২২ হাজার টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন চিংড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। বাকি চিংড়িতে মিটেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চিংড়ি ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা এখন শুধুই স্বপ্ন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সর্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, চিংড়ি দামি ও সৌখিন খাদ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে দেশে দেশে যে মন্দা ও অবরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই পণ্যের চাহিদা গেছে কমে। ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারাও গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত ২৯০টি ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন, যাতে ‘৪৬০ কোটি টাকা লোকসান হবে’ বলে ব্যবসায়ীরা হিসাব করে দেখেছেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের তথ্যে এবার থাকছে বিস্তারিত…
বাগেরহাটের চিংড়ি চাষী সমিতি ও বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসের হিসাবে, কৃষক পর্যায়ে গলদা চিংড়ির উৎপাদন খরচ পড়ছে গড়ে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা । বাগদা চিংড়িতে সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি। প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম দিকে চাষীরা তাদের ঘের প্রস্তুত করে মাঘী পূর্ণিমা তিথি থেকে বাগদার রেণু পোনা ছাড়া শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে জেলার ঘের মালিকরা তাদের ঘেরে রেণু ছাড়তে থাকেন। আর ধরা শুরু হয় বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক বলেন, জেলায় ৪৯ হাজার ১৪৪ হেক্টর জমি জুড়ে ৭৮ হাজার ১০০টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এবার মওসুমের শুরুতে চিংড়ির দামটা বেশ ভালো ছিল। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার আগে গলদা প্রতি কেজি ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। আর বাগদা বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা কেজি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে চিংড়ি মাছের দামটা পড়ে গেছে। বাগদা সাড়ে ৪০০ টাকা এবং গলদা ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, তার জেলায় ৬৬ হাজার চিংড়ির ঘের রয়েছে। এর মধ্যে গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ৪১ হাজার, ২৫ হাজার রয়েছে বাগদা চিংড়ির ঘের। দুটি মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলায় চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৭৫ হাজার চাষী। এ বছর ১১ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ি এবং ৬৬ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে বাগদা চাষ হয়েছে। জেলায় মোট ঘেরের সংখ্যা ৫৪ হাজার ২৭৯টি।
চিংড়ি চাষ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকে বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় চিংড়ি চাষ শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় এখন দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here