আজ শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।   ১২ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গোলাপের পাপড়িও সাভারের দুর্বৃত্তদের কাছে অসহায়!

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

::আলী হোসেন, সাভার::

গোলাপের রঙে মেতে উঠত যে জমি, তা এখন গোলাপের কবরভূমি! দুর্বিত্তদের সেনদৃষ্টিতে মুছে গেছে ফুলচাষী নাজিম উদ্দিনের স্বপ্ন। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুরের দুই বিঘা সরকারি জমিতে ১৫ বছর ধরে গোলাপের চাষ করে আসছিলেন তিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তার গোলাপ বাগান কেটে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু নাজিম উদ্দিন না, একই রাতে ওই এলাকার আরও কয়েকজন কৃষকের প্রায় আট বিঘা জমির গোলাপের বাগানে ছোবল বসিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সব জমিই সরকারি। যা দখলে রেখে ফুল চাষ করে সংসার চালাতেন এসব কৃষক।
বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব দত্ত বলেন, একটি পক্ষ কৃষকদের দখলে থাকা জমি ইজারা নিয়ে তা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছিল। আরেকটি পক্ষ ওই জমিতে কবরস্থান ও ঈদগাহের মাঠ বানানোর চেষ্টা করছিল। সম্ভবত এই দুই পক্ষের কোনো এক পক্ষ গোলাপ বাগান কেটে ফেলেছে।’ সরকারি জমি হলেও অন্য কারো রাতের আঁধারে ফসল কাটার অধিকার কারও নেই উল্লেখ করে ওসি বলেন, ভূক্তভোগী কৃষকদের পক্ষ থেকে সাভার থানায় অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে ফুল বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এখান আর এলাকায় ফুলের হাট বসে না। এই অবস্থায় এলাকার কয়েক শ ফুল চাষি অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আশা ছিল, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে ফুল বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো, কিন্তু দুর্বৃত্তরা সব স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে গেছে। তারা আরও প্রশ্ন রাখেন, ফুলগুলোর কী দোষ ছিল? ক্ষতিগ্রস্থদের ভেজাচোখ আর দীর্ঘশ্বাস যেন বলতে থাকে- গোলাপের পাপড়িও সাভারের দুর্বৃত্তদের কাছে অসহায়!
স্থানীয় বিরুলিয়া ইউনিয়নের (ইউপি) চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, ইউনিয়নের কুমারখুদা মৌজাসহ আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার একর সরকারি জমি রয়েছে। এসব জমি বন বিভাগের বলেই জানেন স্থানীয় লোকজন। এলাকার কৃষকেরা পতিত এসব জমি ৬০-৭০ বছর ধরে দখলে রেখে চাষাবাদ করে আসছেন। কয়েক বছর ধরে অন্য এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি একসনা ইজারা নিয়ে এসব জমি দখল শুরু করছেন। তাঁরা প্লট আকারে এসব জমির দখল টাকা বিনিময়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন অন্যদের। যারা টাকা দিয়ে প্লটের দখল নিচ্ছেন তাঁরা পাকা, আধাপাকা এবং বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ইউপি সদস্য আরও বলেন, জমি দখলে প্রভাবশালীদের সহায়তা করে থাকেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। তাঁরা ঈদগাহ ও কবরস্থানের নামে কয়েক বিঘা জমি দখলের পাঁয়তারা করছিলেন। সম্ভবত তাঁরাই বৃহস্পতিবার রাতে গোলাপ বাগান কেটে ফেলেছেেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের একজন সত্তর বছর বয়সী আনসার আলী। এই বৃদ্ধ বলেন, তিনি ৫০ বছর ধরে দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করছেন। এর আগে তাঁর বাবা ওই জমি চাষ করেছেন। কয়েক বছর আগে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে তিনি জমিতে গোলাপের বাগান করেন। মাসে তাঁর ৫০-৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতো। খরচ বাদে যে টাকা থাকতো তাতে স্বচ্ছলভাবে চলত তাঁর সংসার। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতির কারনে ফুল বিক্রি না করতে পেরে, এমনিতেই বিপাকে ছিলেন। এর ওপর বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর জমির গোলাপ গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ফলে তিনি পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
অপর কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, তাঁরা যুগের পর যুগ ধরে সরকারি জমি চাষ করে খেয়ে পরে বেঁচে রয়েছেন। সরকার ইজারা দিতে চাইলে, তাঁর মতো গরিব কৃষকদের দিতে পারত। আর সরকারের জমি প্রয়োজনে কৃষকেরা তা ছেড়ে দিতেন। কিন্তু জমি ইজারা দেওয়া হচ্ছে প্রভাশালীদের। এর ফলে কৃষকেরা দিন দিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।

- Advertisement -
- Advertisement -